বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসন্ন। 2024 লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে এটিকেই আপাতত ‘পাখির চোখ’ করেছে সকল পক্ষ। একদিকে কেন্দ্র তাদের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছে, তো অপরদিকে বিরোধী দলগুলি নিজেদের মধ্যে বৈঠক সেরে সর্বসম্মতভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করার চেষ্টায় রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যে কেন্দ্রের দিকে পাল্লা বেশি ঝুঁকে রয়েছে, তা বলা বাহুল্য। আর যত সময় এগিয়ে আসছে বিরোধী পক্ষের সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে দেখা দিচ্ছে। প্রথমে রাষ্ট্রপতি হওয়ার ব্যাপারে বিরোধী দলগুলি দ্বারা মনোনীত প্রার্থীরদে ‘অসম্মতি’ প্রকাশ বিরোধী জোটকে অনেকাংশে দুর্বল করে দেয় এবং বর্তমানে শরদ পাওয়ারের ডাকা বৈঠকে মমতার ‘না’ যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের মনোবল আরও তলানীতে নিয়ে গেল।
উল্লেখ্য, গত 15 ই জুন দিল্লিতে মোট 22 টি বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটি বৈঠক আয়োজন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সর্বসম্মতভাবে একটি প্রার্থী মনোনয়ন করা। তবে সেখানে পাওয়ার সহ আরো দুটি নাম মনোনীত করা হয়, যথাক্রমে বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং ফারুক আব্দুল্লাহ। সকল দলগুলি এক্ষেত্রে সর্বসম্মতভাবে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছালেও পরবর্তীকালে শরদ পাওয়ার রাষ্ট্রপতি হওয়ার ব্যাপারে অসম্মতি জানান এবং এরপরই জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাহও ‘না’ করে দেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, “আমার নাম মনোনীত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর এখন যে পরিমাণ বিপদের মধ্যে রয়েছে, তাতে তাদের ছেড়ে আমি রাষ্ট্রপতি পদে লড়াই করতে পারবো না।” ফলে একের পর এক প্রার্থীদের অসম্মতি জানানোয় ক্রমশ ব্যাকফুটে চলে যায় বিরোধী জোট।
সূত্রের খবর, এর মাঝেই পুনরায় বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন শরদ পাওয়ার, তবে তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। জানা গিয়েছে, এই বৈঠকে শামিল থাকার জন্য বিভিন্ন বিরোধী দলের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন পাওয়ার। তবে সেই চিঠির বিষয়বস্তুতে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতেই ক্ষুন্ন হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতীতে সকল বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে মমতার দ্বারা বৈঠক আয়োজিত করা হলেও শরদ পাওয়ারের চিঠিতে তার কোনো উল্লেখ নেই আর এই প্রসঙ্গটি ভালো চোখে দেখেনি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সে কারণেই এই বৈঠকে গরহাজির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কাকে পাঠানো হবে, তা এখনো স্থির করা হয়নি।
অপরদিকে অন্যান্য বিরোধী দলের অবস্থাও ভালো নয়। শরদ পাওয়ারের ডাকা বৈঠকে কংগ্রেস থেকে মাত্র একজন উপস্থিত থাকতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে। এক্ষেত্রে কংগ্রেস পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর নাম দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে এক কংগ্রেস নেতা জানান, “যদি আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রসঙ্গে আমরা কোন কংগ্রেসি নেতার নাম দিই, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বিরোধিতা করবেন। তাই আমরা কোন নাম না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অপরদিকে ফারুক আব্দুল্লাহ না করে দেওয়ায় আপাতত একটিমাত্র নাম পড়ে রয়েছে, তা হলো বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। যদিও শিবসেনার পক্ষ থেকে এক্ষেত্রে এক প্রকার অসম্মতি জানানো হয়েছে। তবে বিরোধী প্রার্থী কে হবেন, সেই বিষয় নিশ্চিত না হলেও সকল বিরোধী দলগুলি একটি সিদ্ধান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে এবং সেটি হল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিজেপি দ্বারা যে নামটি ঘোষণা করা হবে, তার বিরুদ্ধে নামবে সকলে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারকে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বিরোধী জোট, সেটাই দেখার।