বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘সিবিআই এখন প্রধানমন্ত্রী দফতরের অধীনে নেই। আমি মনে করি না যে, এটা নরেন্দ্র মোদী করছেন’, রাজ্যে সিবিআই (CBI) এবং ইডির (ED) একের পর এক তদন্ত এবং গ্রেফতারি নিয়ে এদিন বিধানসভায় ঠিক এভাবেই মন্তব্য প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বরং এক্ষেত্রে অন্যান্য বিজেপি নেতাদের জড়িত থাকার সম্ভাবনাই প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মমতার মুখে আচমকা মোদী-স্তুতির কারণ কি?
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলায় নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি থেকে কয়লা এবং গরু পাচার মামলায় একের পর এক তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের গ্রেফতার করে চলেছে সিবিআই এবং ইডি। তবে এক্ষেত্রে বিজেপি নেতা মন্ত্রীরা জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন তদন্ত করা হচ্ছে না বলে অপরদিকে দাবি করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন সেই প্রসঙ্গে বিধানসভায় একটি নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। তৃণমূলের দুই বিধায়ক নির্মল ঘোষ এবং তাপস রায়ের পক্ষ থেকে এই নিন্দা প্রস্তাব আনা হয় এবং পরবর্তীতে ১৮৯-৬৪ ভোটে সেটি পাশ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে সিবিআই এবং ইডির ‘অতি সক্রিয়তা’ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে উঠে বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সিবিআই এখন প্রধানমন্ত্রী দফতরে নেই। ওটা এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। এক মাসের মধ্যে বাংলায় একের পর এক মামলা করে চলেছে সিবিআই এবং ইডি। আমি কখনোই বিশ্বাস করি না যে, এটা নরেন্দ্র মোদী করছেন। এগুলোর পেছনে বিজেপি নেতাদের হাত রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী নাম না করে অমিত শাহকেই উল্লেখ করতে চেয়েছেন। তবে অপরদিকে বিজেপি নেতাদের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকৃতপক্ষে কাদের কথা বলেছেন, সে বিষয়ে অবশ্য স্পষ্ট কোনো ধারণা মেলেনি। এক্ষেত্রে একদিকে যখন রাজ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যখন সিবিআই এবং ইডির তদন্ত প্রসঙ্গে একের পর এক মন্তব্য করে চলেছেন, আবার অপরদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, ‘বিজেপি নেতাদের’ বলতে এদিন মুখ্যমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্যান্য নেতাদেরই উল্লেখ করেছেন।
তবে বিতর্ক এখানেই থেমে নেই। উল্লেখ্য, সম্প্রতি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী গোপন আঁতাত নিয়ে একের পর এক কটাক্ষ করে বিরোধী দলগুলি। এদিন বিধানসভায় মমতার মোদী-স্তুতির পর তাদের সেই কটাক্ষ আরো বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিন বিধানসভায় সিবিআই এবং ইডি তদন্তের পাশাপাশি বিজেপিকেও কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার একটা প্রস্তাব আনতেই পারে। আমরা স্বাধীনচেতা সরকার। নিরপেক্ষতা আনার জন্যই এই প্রস্তাব পেশ হয়েছে। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আমাদের দলে থাকলে চোর আর কেউ যদি বিজেপিতে যায়, তাহলে ওয়াশিং মেশিন। আসলে এসব কিছু করা হয়ে চলেছে আগামী লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে।”
এরপর শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ডোন্ট টাচ মি। ডোন্ট টাচ মাই বডি। সিবিআই এবং ইডি আপনাকে টাচ করতে পারবে না। ওরা থাক। আমাদের ২৪ ঘন্টা সময় দিন। দেখিয়ে দেব, কোথা থেকে কি বেরোয়।”