বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পঞ্চায়েত ভোট পূর্বে তুঙ্গে শাসক-বিরোধী তরজা। দিক দিক থেকে উঠে আসছে এই একই ঘটনা। শাসকদলের আক্রমণের নিশানায় গেরুয়া শিবির, অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির (BJP) অভিযোগ তৃণমূলকে (TMC) ঘিরে। এই আবহেই এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ( Mamata Banerjee) রীতিমতো একহাত নিলেন কেন্দ্রের মোদী সরকারকে (Modi Government)। সোমবার মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সাগরদীঘিতে এক সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান তৃণমূল সুপ্রিমো। সেখান থেকেই একাধিক অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ঠিক কী কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
এদিন কেন্দ্রকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন “বুলডোজার চালালে বুলডোজার নয়, এবার ক্লোজার হবে”। “গুজরাট থেকে এসে দিল্লি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবন থেকে সব ক্যামেরা তুলে নিয়ে গিয়েছে। সেখানে রাজ্যপাল, প্রধান বিচারপতি থাকেন। তাঁরা কার সঙ্গে কথা বলছেন, সবটাই তুলে নিয়ে গিয়েছে। এই অধিকার কে দিল? এত ঔদ্ধত্য কোথা থেকে এল?”
“জাকিরকে তো প্রাণে মারারও চক্রান্ত করা হয়েছিল। কোনও একজনকে এখানে কাজ করার জন্য দলের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিঁনি লাইন করে কোন লোকটা তৃণমূলের শক্তিশালী, তাঁর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দিচ্ছে। অন্যের বাড়িতে পাঠানোর আগে নিজের বাড়িতে তল্লাশি চালান। ইডি, সিবিআই-কে দিয়ে তল্লাশি করান।” এদিন এমনই বোমা ফাটান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সংযোজন, “জাকির বিড়ি শিল্পপতি। তিঁনি দোষ করলে অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু, তিঁনি কেবল তৃণমূল কংগ্রেস করেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছেন! জাকিরের ২০ হাজার বিড়ি শ্রমিক রয়েছে। তাঁদের মাইনে দেবে কী ভাবে। কটা বিড়ি শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে? কী ভাবে তাঁদের মাইনে দেবে? জাকির বুঝে নেবে ওদেরটা।”
পাশাপাশি তিঁনি বলেন, “একজন সমাজকর্মীকে বঙ্গভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে। বঙ্গভবন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্পত্তি। অনুমতি ছাড়া সেখানে কেউ গেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এরপরেই তিঁনি চলে যান দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের ইস্যুতে। বলেন, “কেউ গেলে সমস্যার কথা নিশ্চয়ই জানাবেন। কারও কথা শুনে কোনও কুৎসা বা অপপ্রচারে কান দেবেন না। আবাস যোজনায় ১৭ লক্ষ নাম বাদ দিয়েছি। তার মধ্যে ভুল করে বিজেপির অনেক নেতা-নেত্রীও নাম তুলেছেন। দুয়ারে সরকার-এ পঞ্চম পর্যায়ে আবেদনকারী ৭,২০০ মা-বোনকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা এখান থেকে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মুরগির বাচ্চা, জমির পাট্টা, জয় জোহার, তপশিলি বন্ধু, বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা দেওয়া শুরু হল।”
সোমবার মুর্শিদাবাদের জন্য বেশকয়েক প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন ,” ৭০০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প মুর্শিদাবাদকে দেওয়া হল এবং ৭৯ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস হল।” পাশাপাশি এদিন নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “ক্ষমতা দেখাচ্ছ? আজ ক্ষমতায় আছে বলে হিরো। কাল ক্ষমতা না থাকলে হয়ে যাবে জিরো। বিগ জিরো।” এরপর বিজেপির সঙ্গে সিপিএম, কংগ্রেস জোট প্রসঙ্গ তুলে তিঁনি বলেন, “শ্রমিকেরা কেন টাকা পাবে না? CPM, BJP জবাব দাও। রাম-বাম-শ্যাম এক হয়েছে। আমাকে ভাতে মারতে গিয়ে আমার মা-বোনেদের ভাতে মারছে। শ্রমিক, কৃষক, গরীব মজদুরকে ভাতে মারছ! কেউ যদি এই টাকা নিজস্ব জমিদারি, নিজস্ব তহবিল ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল করছেন। বাংলা লড়াই করে, তাই টাকা পাচ্ছে না। OBC-র সব টাকা বন্ধ। বকেয়া ৬ হাজার টাকা কেন্দ্র দেয়নি। বাংলা থেকে GST-র মাধ্যমে কর তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, বাংলার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। বাংলাকে ভাতে মারা চলবে না।”