‘সকলের ওপর আমার নজর রয়েছে’, মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বিরাট বার্তা মমতার! পাল্টা কটাক্ষ বিরোধীদের

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১; পর পর তিনটি বিধানসভা ভোটে জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। প্রতিবারই বিপুল জনমত নিয়ে বাংলায় ক্ষমতা এসেছে ঘাসফুল শিবির। একাধিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। তবে প্রতিবারই দলীয় নেতা মন্ত্রীদের শাসন করতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অবশ্য চিত্র বেশ আলাদা!

চাকরি নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি থেকে শুরু করে প্রাক্তন দলীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) গ্রেফতার করেছে ইডি (ED)। এ সকল ঘটনার দরুণ অস্বস্তি ক্রমশ বেড়ে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এর মাঝেই গতকাল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে সকল মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার বার্তা, “এমন কাজ করবেন না, যাতে দল কিংবা সরকারের অসম্মান হয়। প্রত্যেকের ওপর আমার ‘নজর’ রয়েছে।” বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর ‘নজর’ প্রসঙ্গ বেশ উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসএসসি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসায় জেরবার শাসক দল। যেভাবে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন ঘটে চলেছে, তার মাঝেই তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের এই মামলায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি চিন্তায় রেখেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। ফলে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তাকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গতকালের এই বৈঠকে মন্ত্রিসভায় রদবদলের পাশাপাশি বাংলার মোট সাতটি নতুন জেলার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের দাবি, এসব কিছুই দুর্নীতি প্রসঙ্গ থেকে নজর ঘোরাতে করে চলেছেন তিনি। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত অনুযায়ী, গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বার্তার পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। অতীতে সারদা কিংবা নারদার মত দুর্নীতি মামলায় শাসক দলের অনেকে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও বর্তমানে এসএসসি কিংবা প্রাথমিক টেট দুর্নীতি মামলাগুলি যথেষ্ট বিতর্কে সৃষ্টি করেছে। যেভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি নগদ অর্থ পাওয়া গিয়েছে এবং পরবর্তীতে একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এসেছে,বতা যথেষ্ট উদ্বেগের। তবে এর মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা বঙ্গ রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলে, সেটাই মূল প্রশ্ন।

এই প্রসঙ্গকে হাতিয়ার করে অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী দলগুলি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “চ্যারিটি বিগিনস এট হোম। ওনার নিজের ঘরের লোকেদের এ সকল কথা বলা উচিত ছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে বার্তা দিয়েছেন, তা কেউ শুনবে না।”

Untitled design 36 4

অপরদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দলের মন্ত্রীদের বলছেন, দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট না করতে। তবে এক্ষেত্রে মন্ত্রীদের বলা উচিত ছিল যে, ২৯৪ আসনে যিনি প্রার্থী ছিলেন, সেই মুখ্যমন্ত্রীর মূল দায়িত্ব হলো ভাবমূর্তি রক্ষা করা। সব দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে।” সিপিএমের পথে হেঁটে কংগ্রেসের দাবি, “বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ওনার দলের মন্ত্রীরা ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার মত কাজ করেছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী যদি নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করতে চান, তবে অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”


Sayan Das

সম্পর্কিত খবর