বাংলাহান্ট ডেস্ক : মনীষী হওয়ার ইচ্ছে বোধহয় তাঁর অনেক কালের। তাই তো মাঝে মাঝেই প্রাতস্মরণীয়দের ছবির আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাঁর ছবি। এবার এরকমই এক ঘটনা ঘটল পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। একপাশে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং গান্ধীজির ছবি, অন্যপাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং ক্ষুদিরাম বসুর ছবি। কিন্তু সকল মনীষীর মাঝে মধ্যমণি তিনিই। তিনি স্বয়ং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুর পুরসভার সভাকক্ষের দেওয়ালে রয়েছে পাঁচটি ছবি। সকল মনীষীদের সঙ্গে, একই সারিতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখায় জেলাজুড়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়।
তৃণমূল শাসিত পুরসভার বিরুদ্ধে মনীষীদের অপমান করার অভিযোগে সরব হয় বিরোধী পক্ষ। বিতর্ক তৈরি হতেই অবশ্য তড়িঘড়ি মনীষীদের ছবির মাঝখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর ছবি।
এবারের পুরভোটে মেদিনীপুরে তৃণমূল ঝড়ে কুপোকাত সকল বিরোধী শক্তি। ২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল একাই পেয়েছে ২০টি আসন, সিপিএম তিনটি, কংগ্রেস একটি এবং নির্দল পেয়েছে একটি আসন। গত বিধানসভার প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপির ঝুলি শূন্য। পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের সৌমেন খান। জানা গিয়েছে, এই পুরসভায় একটি সভাকক্ষ রয়েছে, যেখানে পুরসভার যাবতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাকক্ষের দেওয়ালেই রয়েছে মনীষীদের ছবি। আর সেখানেই মনীষীদের সঙ্গে একই সারিতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখা ছিল বলে খবর।
সরকারি অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখা নতুন কিছু ব্যাপার নয়। তবে পুরসভার সভাকক্ষে নেতাজি, গান্ধীজি, বিদ্যাসাগর এবং ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গে, একই সারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখা নিয়ে তৃণমূলকে তোপ দেগেছেন সিপিএম কাউন্সিলার সৃজিতা দে বক্সী। তিনি বলেন, ‘কোন যুক্তিতে পুরসভায় মনীষীদের ছবির মাঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখা হয়েছে? এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এভাবে মনীষীদের অপমান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার রাজ্যবাসীর শিক্ষা-সংস্কৃতি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে বলব, সজাগ হতে, প্রতিবাদ করতে।”
এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অরূপ দাস কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচেয়ে বড় মনীষীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে মেদিনীপুর পুরসভা সর্বত্রই প্রধান মনীষী, মুখ্য মনীষী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ধ্বংস করছে এই সরকার। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রাজ্যজুড়ে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ হচ্ছে। সেই দিকে সরকারের কোনও নজর নেই।
কংগ্রেস কাউন্সিলর মহম্মদ সাইফুল এবিষয়ে বলেন, ‘তৃণমূলের আমলে এটা খুবিই স্বাভাবিক ঘটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রপাইটরশিপে দল চালাচ্ছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তিনিই সবকিছুর মালিক। বাকি সবাই তাঁর কর্মচারী। কর্মচারীরা তাদের মালিককে কখনও দেবীর আসনে, কখনও মনীষীদের পাশে বসাচ্ছেন।’
এই বিষয়ে অবশ্য অন্যায় কোনও কিছুই দেখছেন না পুর কর্তৃপক্ষ। পুর চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, ‘এতে তো কোনও অন্যায় বা ভুল হয়নি। আমরা মনীষীদের সম্মান করি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বাংলার জননেত্রী। তাঁর ছবি আমার রুমে এবং সভাকক্ষে রাখা রয়েছে। তাতে আমি মনে করি যে, আমি গর্বিত। এই ধরণের জননেত্রীর ছবি রেখে যে আমরা কাজ করছি, সেজন্য নিজেদের গর্বিত বলে মনে হয়।’ তবে এরপরেও থামছে বিতর্ক। এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও একাধিকবার এই রকম বিতর্কে জড়িয়েছে তৃণমূল। এই বিষয়ে তৃণমূলের সর্বভয়রতীয় স্তর থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।