‘মা মেয়ে-দাদু নাতনির ঝামেলাতেও ওদের CBI চাই’ তীব্র কটাক্ষ মমতার

বাংলাহান্ট ডেস্ক : প্রথম থেকেই বগটুই কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছে রাজ্য। কিন্তু এবার কার্যতই সুর নরম করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই মামলায় রাজ্য আগেই জানিয়েছিল যে যদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের তদন্তের ফলে ঘটনার পিছনের আসল সত্য সামনে আসে তাহলে তাতে আপত্তি বা চ্যালেঞ্জের পথে হাঁটবে না রাজ্য। এবার এদিন বগটুই গণহত্যা মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর দাবি, সিবিআই তদন্তে সবরকম সাহায্যই করবে রাজ্য। কিন্তু যদি তদন্ত কোনও রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত হয় তাহলে বিরোধীতার পথেই হাঁটবে তৃণমূল কংগ্রেস। একই সঙ্গে সিবিআইয়ের ব্যর্থতার একাধিক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে শিলিগুড়ির উত্তরা ময়দানের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই একাধিক প্রসঙ্গে মুখ খুলতে দেখা যায় তাঁকে। সেখান থেকেই তিনি বলেন, ‘আমি মানছি পুলিশের ভুল ছিল প্রথমে। খুন হওয়ার পর ওদের আশঙ্কা করা উচিৎ ছিল কিছু একটা ঘটতে পারে। পুলিশের ভুল আছে, আমরা তার জন্য ব্যবস্থাও নিয়েছি। রামপুরহাটের ঘটনা ঘটার পর আমাদের সিট অনেক কাজ করেছিল। সিবিআই করেছে, ভাল করেছে। সিবিআই কাজটা করুক, আমাদের সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু এটা না করে যদি বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের কথামত অন্য কাজ করতে যায়, তা হলে রাস্তায় আন্দোলনে আমরাই আবার নামব।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি দেখেছি নোবেল পুরস্কার চুরির পর সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। নন্দীগ্রামে ১৪ জনের গণহত্যা হয়েছিল, সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। নেতাইয়ে ৭ জন মারা গিয়েছিল। সিবিআই কিছু করতে পারেনি। সিঙ্গুরে তাপসী মালিককে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। আজ পাড়ায় পাড়ায় দুটো ক্লাবের ঝামেলা হলেও বলছে সিবিআই চাই। দাদু নাতনির গন্ডগোল হল, কী মা মেয়ের ঝামেলা হল বলছে সিবিআই চাই। ওদের জিজ্ঞাসা করুন আর কত নিচে নামবে?’

একই সঙ্গে উন্নাও হাথরাশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই মামলাগুলিতে কেন সিবিআই তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি সেই প্রশ্ন তুলে তাঁর কটাক্ষ,’উন্নাওয়ে একটা মেয়ে সাক্ষী দিয়ে বেরোচ্ছিল তাঁকে জীবন্ত রাস্তায় জ্বালিয়ে দিল। সেও সংখ্যালঘু ঘরের মেয়ে ছিল। আপনারা তখন ক’টা সিবিআই করেছিলেন? কী বিচার দিয়েছিলেন? উত্তর প্রদেশের হাথরাশে যে মারা গেল, কী বিচার করেছিলেন? ক’টা সিবিআই হয়েছিল? লখিমপুরে কৃষকরা আন্দোলন করছে, মন্ত্রীর ছেলে গাড়ি চালিয়ে মেরে দিল। বিচার হল? অসমে এনআরসি নিয়ে, এনপিআর নিয়ে কত লোক মারা গেলেন, কেউ বিচার পাননি।’

এই প্রসঙ্গে অবশ্য তাঁকেও এক হাত নিয়েছে বিরোধী শিবির। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার কথায়, ‘উনি রাস্তায় নামবেন নাকি পুকুরে নামবেন সেটা বড় কথা নয়। পুলিশের উপর দোষ চাপিয়ে বিষয়টি আড়াল করাত চেষ্টা করলে চলবে না। পুলিশকে পঙ্গু করে রাখছে তৃণমূলের সিস্টেম। ব্যবস্থা নেওয়া হবেটা কীভাবে।’ অন্যদিকে সিটকে ব্যর্থ বলে দেগে কটাক্ষ করছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর দাবি, সিট ব্যর্থ, সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীকে বলে দিতে হয় কাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে ঘিরে যে আরও একবার সরগরম বঙ্গ রাজনীতি, তা বলাই বাহুল্য।

Avatar
Katha Bhattacharyya

সম্পর্কিত খবর