বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কেন্দ্রের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধ ক্রমাগত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষত কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে একদিকে যখন প্রথম থেকেই সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখনই অন্যদিকে সেভাবে কোনো জবাব আসেনি প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকে। এর আগেও দু’বার প্রত্যাঘাত করেছেন মমতা। কিন্তু তার কোনো সদুত্তর মেলেনি। অন্যদিকে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে সাথে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যাদের মধ্যে রয়েছেন উদ্ধব ঠাকরে, স্ট্যালিন থেকে শুরু করে যোগী আদিত্যনাথ সকলেই। কিন্তু ফোন পাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর এই প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি বাংলাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরে দিন ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বেশকিছু ডিএমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৫৪ জনের এই বৈঠকে এক মিনিট কথা বলার সুযোগই পেলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর এর পরেই ফের একবার সাংবাদিক বৈঠকে এ বিষয়ে সরব হলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো মানছেন না প্রধানমন্ত্রী। মিটিংয়ে ডেকে মুখ্যমন্ত্রীদের কথাই বলতে দিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’’ এর সাথে সাথেই তিনি আরো অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে তাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সৌজন্য বিনিময় হয়নি। ক্যাজুয়াল সুপারফ্লপ মিটিং।” একইসঙ্গে এদিন প্রেস কনফারেন্সে ফের একবার প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষের সুরে বেঁধেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিজেপি শাসিত এলাকার ডিএমদের বলতে দেওয়া হয়েছে। হাতে প্রশ্ন নিয়ে পুতুলের মত বসে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী নিজের মত বলে গেলেন কি বললেন তাও স্পষ্ট নয়।
তার মতে, ভয় থেকেই মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আসলে ইনসিকিউরড ফিল করছেন। বাংলা তিন কোটি ভ্যাকসিন চেয়েছিল। কিন্তু তা দেওয়া হচ্ছে না বরং ধাপে ধাপে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ মাসে ২৪ লক্ষ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল পাওয়া গেছে মাত্র ১৩ লক্ষ বলেও এদিন অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয় বাংলায় কোভিড বাড়ার পিছনে এদিন ফের একবার প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যেটুকু গ্রামে-গ্রামে কোভিড বেড়েছে আট দফার ভোটের জন্য। এখনো ১০৫ কোম্পানি বাহিনী রয়েছে।”
কয়েকদিন ধরেই যথেষ্ট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গঙ্গায় ভেসে আসা করোনার মৃতদেহ। এদিন এ বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নদীতে মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশটাকে আজ বিষাক্ত করে দিয়েছে। আবার বলছে করোনা কমে গিয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এদিন বলেন করোনা কমে গিয়েছে। আর তার পরিপ্রেক্ষিতেই ফের কটাক্ষ ছুড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “উনি বললেন নাকি করোনা কমে গেছে, তাহলে এত লোক মরছে কিভাবে?” শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারনায় দিন ফের একবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বাক্যবাণ হানেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মতে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সকলকে ফ্রিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তা না করে এখন মুখ লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন। সকলকে ফ্রিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তাও বলতে দিলেন না।
একইসঙ্গে এ দিন রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। ফের একবার তার কথায় উঠে এলো প্রতিহিংসার তত্ত্ব। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা। ববি অনেক কাজ করে, ও প্রথম কোভিশিল্ডের টিকা নিয়েছিল রাজ্যে। সেই ববি, সুব্রত দাদের আটকে রেখেছে ওরা। আশা করি এর সঠিক বিচার হবে।’’
শুধু তাই না এভাবে বৈঠককে কার্যত অপমান বলেও এদিন সরব হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন আগামী দিনে কেন্দ্র রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ এই বৈঠক কি প্রভাব ফেলে সে দিকেই নজর থাকবে সকলের।