বাংলা হান্ট ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্দেশ দিয়ে দলের রাজ্যসভার সদস্য সুখেন্দুশেখর রায় ও প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী কে মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে পাঠিয়েছিলে। তারা সেখানে গিয়ে অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনলেন।
অসমের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বাংলার নেতাদের কাছে জানিয়েছেন যে নাগরিকপঞ্জি তে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাতিল করা হয়েছে। এই সমস্ত মানুষদের অনেকেরই বৈধ কাগজপত্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে মূল সমস্যা হল তালিকা থেকে বাদ পড়ার ১২০ দিনের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে হবে। এরপরেই শুরু হবে শুনানি।
অসম নেতারা অভিযোগ জানিয়েছেন, আবেদন নেওয়া হচ্ছে এক জেলায়, তার শুনানি নেওয়া হচ্ছে অন্য জেলায়। যার জেরে অনেকেই শুনানিতে হাজির হতে পারছেন না। এমনকি যে যায়গায় শুনানি হবে, সে জায়গাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে নাম বাদ চলে যাচ্ছে তালিকা থেকে। অসমের তৃণমূল নেতারা মনে করছেন এই ঘটনার পেছনে কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।
অসমের অসহায় মানুষরা আইনি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন বাংলার দুই নেতার কাছে। সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘দলের নেত্রীর কাছে একটি রিপোর্ট দেব। এ ব্যাপারে তিনি যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী কাজ হবে।’ সুখেন্দু আরও বলেন, ‘প্রয়োজন হলে আবার গুয়াহাটি যাব। আমরা বলেছি, মমতা ব্যানার্জি আপনাদের পাশে আছেন। তিনি নাগরিকপঞ্জি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান।’ এদিনই দুই নেতা গুয়াহাটি থেকে ফিরে আসেন।
নাগরিক পঞ্জিকা নিয়ে সম্প্রতি চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে। প্রতিবাদের মেতে উঠেছে বিজেপির বিরোধী দলগুলি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীকে আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন যে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হবেন না। এমনকি দিল্লি থেকে ফিরে মমতা বলেন,”অসমের নাগরিকপঞ্জি কংগ্রেসের আমলে শুরু হয়েছিল।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলার বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী কে রাজ্যে দেউচা পাঁচামি কয়লাখনির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আলোচনা পর্ব চলার পর মমতা বেরিয়ে এসে বলেছিলেন, “NRC অসমের বিষয়।”
দিল্লি সফরে গিয়ে শুধু প্রধানমন্ত্রী নয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে কোনরকম কথা হয়নি বৈঠকে। অসমে ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলা, হিন্দিভাষী ও গোর্খারা। ভারতীয়দের যেন সুযোগ দেওয়া হয়।”
শুধু তাই নয় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ”এনআরসি-র জন্য বলতে গেলাম। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে পড়ে। তাই বলে এলাম দিল্লি গিয়ে।” অন্যদিকে বাংলায় ভোটার তালিকায় নাম তোলা ও ডিজিটাল রেশন কার্ড নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে সর্বত্র। এই প্রসঙ্গে সকলকে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা যে যে যে বাংলায় কোনওভাবেই এনআরসি চালু হবে না।