বাংলাহান্ট ডেস্ক : বছর বত্রিশের কমলেশ বর্মা। পেশায় টোটোচালক (Toto Driver)। পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা আর একরত্তি খুদেকে নিয়েই তার সংসার। সন্তান জন্মের কয়েক মাস পরেই চোখ বন্ধ করেন তার স্ত্রী অন্তিম। তারপর থেকে আট মাসের কন্যাসন্তানের কাছে তিনিই মা আর তিনিই বাবা। ফলে, কমলেশ বর্মার জীবনযুদ্ধে ফুটে ওঠে এক অসহায় বাবার কাহিনী।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে সন্তানের দেখাশোনার পুরো দায়িত্বই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন কমলেশ। তবে শুধুমাত্র সন্তানের দেখাশোনা করাই নয়, শয্যাশায়ী মায়ের সেবা করা থেকে শুরু করে টোটো নিয়ে বেরোনো, সবই একা হাতে সামলান কমলেশ। অসুস্থ মা আর আটমাসের কন্যাকে নিয়েই উত্তরপ্রদেশের (Uttarpradesh) বালিয়ায় একটি ঘুপচি ঘরেই দিন কেটে যায় কমলেশের।
স্মৃতিচারণ করতে করতে কমলেশ জানান, “৩ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল আমার। সে সময় একটি কারখানায় কাজ করতাম। মাসে ৮-১০ হাজার টাকা উপার্জন হত। তাতে ভাল ভাবে সংসার চলে যেত। আট মাস আগে আমাদের কোল আলো করে সরস্বতী আসে। স্ত্রী আর আমি খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছিলাম।” তবে কন্যাসন্তান হওয়ায় অনেকেই নানা কটু কথা শুনিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে, সেইসব বাজে কথায় কান না দিয়ে কমলেশ যখন আরোও বেশি উপার্জন করে নতুন স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছিলেন ঠিক তখনই সংসারে বিপর্যয় নেমে আসে। আচমকা স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরই তাঁর মৃত্যু হয়। কী ভাবে মেয়েকে মানুষ করবেন তা ভেবেই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন কমলেশ। কমলেশের এই পরিস্থিতি দেখে তাঁর শ্যালক সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তিনি কমলেশকে একটি টোটো কিনে দেন।
এখন, প্রতিদিনের লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য টোটোকেই উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম বানিয়েছেন কমলেশ। কমলেশের রোজের রুটিন হল ভোরে ওঠে রান্না করে মাকে খাইয়ে মেয়ের খাবারের বন্দোবস্ত করা। তারপর মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়েন যাত্রী খুঁজতে। ৫০ কিলোমিটার টোটো চালিয়ে দিনে ৮০০-১০০০ টাকা আয় হয় কমলেশের। এ ভাবেই একাধারে তিনি একরত্তি সরস্বতীর মা এবং বাবার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।