ঘরে অসুস্থ স্ত্রী, পাচ্ছেন না পেনশনও! অগত্যা দিদির অনুপ্রেরণায় চায়ের দোকান খুললেন প্রাক্তন সরকারি কর্মী

বাংলাহান্ট ডেস্ক : সরকারি দফতরের কর্মী ছিলেন শিবশঙ্কর। ওই দফতরের অধীনে থাকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের একটি স্কুলে হাতের কাজ শেখাতেন তিনি। অবসর নিয়েছেন গত ডিসেম্বরে। এখনও মিলেনি কোনো পেনশন । তাই সংসার এর হাল ধরতে বিকল্প হিসাবে চায়ের দোকান বেছে নিয়েছেন তিনি।

বাঁকুড়া শহরের জুনবেদিয়া বাইপাসের ধারে শিবশঙ্করবাবুর এই চায়ের দোকান, সে দোকানের নাম রেখেছেন ‘শিল্পশ্রী’। সেইখানে মিলছে ছোট-বড় কাপে তিন থেকে পাঁচ টাকা দামে চা। দোকানের মালিক শিবশঙ্কর বাবু জানান, ‘‘টাকার অভাবে দেওয়ালে পিঠ ছুঁই ছুঁই অবস্থা। সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন আয়ের উৎস না থাকলে শীঘ্রই সংসার অচল হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চপ-শিল্পের কথা বলেছিলেন। চপ ভাজতে পারি না। তাই বিকল্প হিসাবে চায়ের দোকান খুলেছি।’’

শিবশঙ্করবাবু আরো জানান, তাঁর স্ত্রী সুস্মিতাও জনশিক্ষা প্রসার দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। কুড়ি বছরের বেশি কাজ করার পর ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি, নিয়মমাফিক স্ত্রীরও ‘গ্র্যাচুইটি’, পেনশন-সহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচ বছরেও সে সব পাওনা মেলেনি, প্রশাসনিক দফতরে স্ত্রীর প্রাপ্য চেয়ে বারবার ছুটে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি!’’ হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত স্ত্রীর ওষুধের খরচ মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়ে। তাদের পড়াশোনা ও টিউশন বাবদ খরচ রয়েছে। তাই সংসারের এর হাল ধরতে চায়ের দোকান খুলেছি।’’

এই বিষয়ে বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘যুবক-যুবতীরা চাকরি পাচ্ছেন না, প্রবীণেরা অবসরকালীন প্রাপ্য পাচ্ছেন না— এটাই এখন এ রাজ্যের পরিস্থিতি। তাই এমএ পাশ তরুণী থেকে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধকে চায়ের দোকান দিতে হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের অলকা সেন মজুমদারের পাল্টা দাবি, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী নিশ্চয় তাঁর প্রাপ্র্য পাবেন। প্রক্রিয়ায় হয়তো একটু সময় লাগছে। তার ফাঁকে তিনি বসে না থেকে বিকল্প আয়ের সংস্থান করেছেন, তা সাধুবাদের যোগ্য।’’

IMG 20220614 WA0001

এছাড়াও এই বিষয়টি নিয়ে বাঁকুড়া জেলার জনশিক্ষা প্রসার দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পার্থসারথি কুণ্ডু বলেন, “শিবশঙ্করবাবুর পেনশনের ফাইল সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তা শীঘ্র পাঠাতে বলেছি। সেটি পেলেই দ্রুত নির্দিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘ওঁর স্ত্রীর পেনশন, গ্র্যাচুইটির বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। যাতে তাড়াতাড়ি সব প্রাপ্য পেয়ে যান, চেষ্টা চলছে।’’


Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর