বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতীয় সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের মধ্যে অন্যতম মান্না দে (Manna Dey)। প্রবোধ চন্দ্র দে, ডাক নামেই যিনি ছিলেন গোটা দেশে জনপ্রিয়। ৫০-৬০ এর দশকে ভারতীয় সঙ্গীত দুনিয়ায় দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন তিনি। দীর্ঘ সাত দশকের সোনায় বাঁধানো কেরিয়ারে অগুনতি গান উপহার দিয়েছেন তিনি যা ক্লাসিক হয়ে রয়ে গিয়েছে। কিন্তু এমন কিংবদন্তি শিল্পীর শেষ জীবনটা নিয়েই রয়ে গিয়েছে বিতর্ক।
মান্না দে, নামটা শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। সে যুগে প্রেম ভাঙা থেকে নতুন প্রেমে পড়া সব রকম পরিস্থিতির জন্যই ছিল তাঁর কোনো না কোনো গান। কফি হাউসের আড্ডা থেকে শুরু করে আমি যামিনী তুমি শশী হে, হিন্দিতে পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া হ্যায়, জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পহেলি, ইয়ে দোস্তি, এক চতুর নার এর মতো কালজয়ী গান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
গানের জগতে তিনি যতটাই দাপুটে ছিলেন, বাস্তবটা ছিল অন্যরকম। স্ত্রী সুলোচনার উপরে অনেকটাই নির্ভর করে ছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী বিয়োগের পর কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন শিল্পী। নিজেকে একা বলে দাবি করতেন অনেকবার। দীর্ঘদিন মুম্বইতে কাটালেও শেষ জীবনে বেঙ্গালুরুতে চলে যেতে বাধ্য হন মান্না দে।
ছোট মেয়ের বেঙ্গালুরুতে কাজ শুরু করায় সেখানে চলে যেতে হয়েছিল শিল্পীকে। এরপরেই বদলে যায় তাঁর জীবন। শোনা যায়, এক নামী ব্যক্তিত্ব মান্না দের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তাঁর বাড়িতে ঢুকতে পারেননি শেষমেষ। স্ত্রী ‘সুলু’র জন্য ৮টি গান উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন মান্না দে। কিন্তু তাঁর মনে হয়েছিল, পরে হয়তো কেউই কষ্ট করে তাঁর জন্য গান রেকর্ড করবে না। তাই নিজেই জিজ্ঞাসা করে রেখেছিলেন খরচ।
কিন্তু সেই গান রেকর্ড করতে গিয়েও আম সমস্যা হয়নি। শোনা যায়, মিউজিক অ্যারেঞ্জার শান্তনু এই গানগুলি রেকর্ড করার জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। কিন্তু শিল্পীকে ফোন করায় তিনি ইতস্তত করে বলেন, যে ছোট মেয়ে কাজে বেরোবে তাই পরে আসতে। এও শোনা যায়, মান্না দে নাকি আক্ষেপ করেছিলেন, তাঁকে তালা বন্ধ করে রেখে মেয়ে কাজে বেরোন। বাঁচার ইচ্ছাটাই চলে গিয়েছে তাঁর। এখানেই শেষ নয়। শিল্পী বেঙ্গালুরুতে থাকাকালীন নাকি সঙ্গীতশিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায় ফোন করেও তাঁকে পাননি। শেষ জীবনে রেওয়াজের জন্য একটা হারমোনিয়ামও নাকি দেওয়া হয়নি মান্না দে।
মান্না দে-র মৃত্যুর পর সংবাদ মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়তে বিতর্ক ওঠে চরমে। সে সময়ে শিল্পীর ভ্রাতুষ্পুত্র পালটা দাবি করেন, তাঁদের পরিবারকে নীচু করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে এসব রটানো হচ্ছে। তিনি এও বলেছিলেন, তিনি নিজে বেঙ্গালুরু না গেলেও নিশ্চিত যে কাকা মান্না দে ওখানে ভাল ছিলেন। তিনি যদি কখনো কিছু বলে থাকেন তাহলে সেটা নিশ্চয়ই বৃদ্ধ বয়সের খামখেয়ালিপনার জন্য।