বাংলাহান্ট ডেস্ক: এত বছর পর ফের শিরোনামে সিঙ্গুর আন্দোলন (Singur Protests)। বুধবার একটি সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাঁরা তাড়াননি। তাদের বিতারিত করেছিল সিপিএম-ই। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে জোরদার রাজনৈতিক চর্চা। এমনকি, তাঁর দাবিতে অবাক সিঙ্গুরের চাষিদেরই একাংশ। কেমন আছে সিঙ্গুরের সেই জমিগুলি? এত বছর পর কীরকম সেখানকার হাল হকিকত?
২০০৮ সালের সিঙ্গুর আন্দোলনের পর কেটে গিয়েছে প্রায় ১৪টা বছর। ২০২২-ও শেষ হতে চলল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে টাটাদের (Tata Group) জন্য অধিগৃহীত জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে চাষিদের। কিন্তুই সেই জমির অন্তত ২৫০ একর এখনও চাষযোগ্য করা যায়নি। অথচ চেষ্টা কম হয়নি। সেখানে আজ জমেছে আগাছা। শরতে ফুটেছে কাশফুল। এদিনের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি প্রসঙ্গে খাসেরভেড়ির এক চাষি বলেন, “টাটাদের কারখানার জন্য আমি ৫২ বিঘে জমি দিয়েছিলাম। সিঙ্গুরে কারখানা হোক চেয়েছিলাম। তাতে ছেলেরা চাকরি পেত। কিন্তু তৃণমূলের ভুল আন্দোলনের জন্যই তা হল না।”
আরও এক বাসিন্দার গলাতেও একই ক্ষোভের সুর। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা দাবি করেছেন তা অসত্য। কারখানার জন্য ৪২ বিঘে জমি দিয়েছিলাম। যদি জোর করে জমি নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে উনি সেই তালিকা আগে প্রকাশ করুন। ওঁরা টাটাদের না তাড়ালে সিঙ্গুর, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়ায় টাটাদের প্রকল্পের কাজে যুক্ত অফিসারেরা যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন, তাঁদের কেন হুমকি দেওয়া হত? উনিই কারখানা করতে দেননি।”
খাসেরভেড়ির অন্য এক বাসিন্দার আবার ভিন্ন মত। তিনি রাজি হননি জমি দিতে। কিন্তু তাঁর আড়াই বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। যদিও তিনি তাঁর জমি ফেরত পেয়েছেন এবং চাষও করছেন। যদিও তাঁর পরিচিত অনেকেই জমিতে চাষ করতে পারছেন না। কারণ, জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গোপালনগর এলাকার আরও এক বাসিন্দা জানান, তাঁরা জমি দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এত বছরে অনেক দোষারোপ হয়েছে। এবার শিল্প হোক চান তাঁরা।
বাম আমলে সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেটা ২০১৬ সাল। এরপর রাজ্যের তৃণমূল সরকার সেই জমিকে চাষযোগ্য করে তোলার আশ্বাস দেয়। সেই মতো চেষ্টা করা হলেও অধিগৃহীত প্রায় এক হাজার একর জমির মধ্যে অন্তত ২৫০ একর জমি এখনও চাষযোগ্য করা যায়নি। কোথাও গজিয়েছে আগাছা, কোথাও ঝোপঝাড়। কোথাও আবার দেখা যায় কাশফুল।
সেখানকার চাষিদের ক্ষোভ, বৃষ্টি হলেই জমিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। তাই চলতি বছরের বর্ষাতেও সেখানে চাষ করতে পারেননি তাঁরা। চাষিরা জমি ফেরত পাওয়ার পর প্রকল্প এলাকার মধ্যে গোপালনগরে সর্ষেবীজ ছড়িয়ে চাষের সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে এবং আরও বেশ কিছু জায়গায় বর্তমানে চাষ হচ্ছে। কয়েকটি মাছের ভেড়িও তৈরি হয়েছে।