বাংলাহান্ট ডেস্ক : তাঁর পরিচয় বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কুইন’ হিসেবে। বিভিন্ন ছবিতে দুঃখ কষ্ট, কান্নাকাটির দৃশ্যে অনবদ্য অভিনয় করে এই উপাধি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই উপাধি রূপোলি জগতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তব জীবনেও নিদারুণ সত্যি হয়ে উঠেছিল অভিনেত্রীর। তিনি মীনা কুমারী (Meena Kumari)। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সর্বকালের সবথেকে সুন্দরী অভিনেত্রীদের তালিকায় তাঁর স্থান রয়েছে প্রথম দিকেই। শুধু তাই নয়, বলিউডের সবথেকে ধনী অভিনেত্রী হিসেবেও নাম করা হয় তাঁর।
বলিউডে মীনা কুমারীর (Meena Kumari) দেখার মতো ছিল দাপট
সময়টা ৫০-৬০ এর দশক। সে সময়েই উত্থান মীনা কুমারীর (Meena Kumari)। অসামান্যা সুন্দরী এবং দুর্দান্ত অভিনয় দক্ষতা দিয়ে অচিরেই দর্শকদের মনে পাকাপোক্ত জায়গা করে নেন তিনি। সে সময় বলিউডে ছিল শুধু মীনা কুমারীর (Meena Kumari) রাজত্ব। দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন প্রতিটি ছবিতে। উপহার দিয়েছেন ‘পাকিজা’, ‘বৈজু বাওরা’, ‘পরিণীতা’, ‘কাজল’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ এর মতো কালজয়ী সমস্ত ছবি। তবে পর্দায় এত সফল একজন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনটা কেমন ছিল জানেন?
জন্মের পরেই হয়ে যান ব্রাত্য
জানা যায়, তাঁর জন্ম হওয়ার পর তাঁর বাবা খুশি হতে পারেননি। ছেলে চেয়েছিলেন, মেয়ে হওয়াতে তাঁর আনন্দ উড়ে যায়। এমনকি মীনা কুমারীকে (Meena Kumari) নাকি অনাথ আশ্রমেও দিয়ে এসেছিলেন তাঁর বাবা। পরবর্তীকালে বাড়িতে ফিরিয়ে আনলেও বাবার সঙ্গে আর কোনোদিন সম্পর্ক ভালো হয়নি মীনা কুমারীর (Meena Kumari)। ছোট থেকেই দুঃখ নিত্য সঙ্গী ছিল তাঁর। সুখ পাননি বিবাহিত জীবনেও। এমনকি তাঁর মা হওয়ার স্বপ্নও চিরতরে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
আরোও পড়ুন : শনির দশা কাটতেই রবিবার আরও সস্তা হল সোনা! কলকাতায় কত?
বিবাহিত জীবনে পেয়েছেন সীমাহীন দুঃখ
পরিচালক প্রযোজক কামাল আমরোহির প্রেমে পড়েছিলেন মীনা কুমারী (Meena Kumari)। এদিকে কামালের তখন দু বার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিন সন্তানের বাবা ছিলেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই এমন পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে চাননি অভিনেত্রীর বাবা। মেয়েকে বোঝাতে ব্যর্থ হলে নাকি তাঁকে বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছিলেন তিনি। সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে কামালকে বিয়ে করেন মীনা কুমারী (Meena Kumari) । পালটা কামাল তাঁর কাছে রেখেছিলেন একগুচ্ছ শর্ত। অন্য পরিচালকের ছবিতে সই করা যাবে না, খোলামেলা পোশাক পরা যাবে না, মেকআপ রুমে কোনো পুরুষকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না, সন্ধ্যা ছটার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে, এমন সব শর্ত একজন অভিনেত্রী হিসেবে অসম্ভব জেনেও মেনে নিয়েছিলেন মীনা কুমারী। পালনও করতেন অক্ষরে অক্ষরে। কিন্তু পরিবর্তে তাঁর কপালে জুটত অকথ্য অত্যাচার। শোনা যায়, তিন তিনবার গর্ভপাত হওয়ার পর আর কখনো মা হতে পারেননি মীনা কুমারী। শেষমেষ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের।
অকালে হারিয়ে যান তারকা
বিবাহ বিচ্ছেদের পরে মদের নেশায় ডুবে যান মীনা কুমারী (Meena Kumari)। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দুঃখ ণা, দুর্ভাগ্য তাঁর পিছু ছাড়েনি। ১৯৭১ সালে ধরা পড়ে লিভার সিরোসিস। তাই নিয়েই অভিনয় করেন কালজয়ী ‘পাকিজা’ ছবিতে। ১৯৭২ সালে ছবি মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পরেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মীনা কুমারী। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ট্র্যাজেডি কুইন।