বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: মহিলা আইপিএল (WPL) শুরু হওয়ার আগে যখন কাউকে প্রশ্ন করা হচ্ছিলো যে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সেরা বোলার বা সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি কে হতে চলেছেন, তাহলে অনেকের মুখেই উঠে আসছিল ইংল্যান্ডের সোফি একেলস্টোন, অস্ট্রেলিয়ার জেস জোনাসেন বা মেগান শ্যুট বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হিলি ম্যাথিউসের নাম। কেউ কেউ ভারতের তারকা বোলার দীপ্তি শর্মা বা রাজেশ্বরী গায়কোয়াডের নামও নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সবাইকে পেছনে ফেলে দুটি রাউন্ডের পর আপাতত মহিলা আইপিএলের সবচেয়ে সফল বোলার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের (Mumbai Indians) হয়ে খেলতে থাকা বাংলার (Bengal) বাঁ-হাতি স্পিনার সাইকা ঈশাক (Saika Ishaque)।
মহিলা আইপিএলের নিলামে মাত্র ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাকে দলে নিয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। হরমনপ্রীত কৌরের পরিচালনায় আপাতত তিনি এখনও এই মহিলা আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স নিজেদের প্রথম ম্যাচে গুজরাট জায়ান্টস এবং দ্বিতীয় ম্যাচে রয়াল চ্যালেঞ্জারস ব্যাঙ্গালোরকে হারিয়েছে। দুই ম্যাচেই বল হাতে দলের জয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বাংলার সাইকা।
গুজরাটের বিরুদ্ধে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স জয় পেয়েছিল ১৪৩ রানের বিরাট ব্যবধানে। সেই ম্যাচে ৩ ওভার হাত ঘুড়িয়ে ১টি মেডেন সহ মাত্র ১১ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন বাংলার এই বোলার। দ্বিতীয় ম্যাচে আরসিবির বিরুদ্ধে ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। পেয়েছিলেন সোফি ডিভাইনের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। মাত্র দুই ম্যাচ খেলে ছটি উইকেট চলে এসেছে তার ঝুলিতে। আপাতত পেছনে ফেলে দিয়েছেন হিলি ম্যাথিউস, সোফি একেলস্টোনদের মতো বোলারদের।
বর্তমানে ২৭ বছর বয়সী, পাক সার্কাসে বড় হওয়া সাইকেল জীবনের শুরুটা অত্যন্ত মসৃণ ভাবে হয়নি। অত্যন্ত অল্প বয়সে তিনি নিজের পিতাকে হারিয়েছিলেন। যদিও তার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা কোনওদিনও কম হয়নি কিন্তু তার জীবনে এমন একটা সময়ে এসেছিল যখন বাধ্য হয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন তিনি। কিন্তু এমন সময় তিনি জাতীয় নির্বাচক মিঠু মুখার্জির নজরে চলে আসেন এবং তিনি তাকে পরামর্শ দেন স্পিন বোলিং কোচ শিবসাগর সিং-এর কাছে গিয়ে নিজের বোলিং নিয়ে উন্নতির চেষ্টা করার।
সেই পরামর্শ মেনেছিলেন সাইকা। শিবসাগর তাকে ইস্টবেঙ্গল পুরুষ ক্রিকেট দলের সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এটি তার খেলা এবং আত্মবিশ্বাস দুটোরই উন্নতি ঘটিয়েছিল। প্রথমে তিনি কালীঘাট ক্লাবের মহিলা দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি অনূর্ধ্ব ১৯ এবং অনূর্ধ্ব ২৩ বাংলা দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর ইন্ডিয়া গ্রিন, ইন্ডিয়া এ, এবং ইন্ডিয়া ডি, দলের হয়েও খেলেছেন। বাংলা অনূর্ধ্ব ২৩ দলের হয়ে তিনি সর্বভারতীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্টও জিতেছেন।
বাংলার সিনিয়র দলের হয়ে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পর সকলের নজর পরে তার ওপর। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স শিবিরে যোগ দিয়ে এখন তিনি ঝুলন গোস্বামীর গাইডেন্স পাচ্ছেন। এই পারফরম্যান্স যদি ধরে রাখতে পারেন সায়িকা তাহলে ভবিষ্যতে ভারতীয় দলের দরজা ও তার সামনে খুলে যাবে, এমনটাই বিশ্বাস করেন প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটরক্ষক পার্থিব প্যাটেল।