বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল রাজ্য। বিগত প্রায় একবছর থেকে দুর্নীতি চাদরে মোড়া যেন গোটা এই বঙ্গ। শিক্ষক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে কাঠমানি, বারংবার একাধিক ইস্যুতে নাম জড়িয়েছে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের। যার ফলে একেবারে কঙ্কালসায় দশা তৃণমূলের। দুর্নীতির দায়ের জেলবন্দি রাজ্যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে বহুজনা।
চারিদিকে যখন দুর্নীতি আর কোটি কোটি টাকার খেলা, ঠিক তখনই আপনাদের জানাবো এমন এক জনপ্রতিনিধির কথা যিনি মূল্যবৃদ্ধির এই চড়া বাজারেও মাত্র ৫ হাজার টাকায় চালান সংসার।
তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য (TMC leader) নবদ্বীপের আরতি দেবনাথ (Arati Debnath)! এক টিনের চালের বাড়িতে তার বসবাস। বয়স ৬০ পেরিয়েছে বহুদিন, বর্তমানে ৬৭। নিজে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে এলাকার বহু মানুষের বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন ঠিকই, তবে নিজের সম্বলটুকু বলতে মাথার ওপর ওই টিনের চাল। যেই চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টি হলেই পরে জল, ভিজে যায় গোটা বিছানা।
বর্তমানে একলাই তার পথ চলা, ছোট নেত্রীর সংসার। ছেলেবেলাতেই পরলোকে গমন করেন আরতিদেবীর মা। এরপর ২০ বছর বয়সেই বাবাকে হারান তিনি। বাবা চন্দ্রমোহনবাবু ছিলেন জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতা। বাবা চলে যাওয়ার পর একা হাতে ভাইবোনদের মানুষ করেছেন তিনি। সংসার সামলাতে সামলাতে বিয়েটা আর করা হয়ে ওঠেনি। ১৯৯৮ সালে যখন তৃণমূল নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল, সেই সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছত্রছায়ায় তিনি। এখনও পর্যন্ত তিনি তৃণমূলের হয়ে টানা ৫ বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এই আরতিদেবী।
বর্তমানে নবদ্বীপের জেলা পরিষদ সদস্য তিনি। সেই পদের ভাতাতেই কোনো রকমে চলে তার একার সংসার। প্রথম থেকেই ভেবে নিয়েছিলেন জনগণের সেবাতেই নিজেকে উৎসর্গ করবেন। আর ঠিক তেমনটাই এখনও করে চলেছেন। মানুষের যে কোনো দরকারে সবার আগে তিনি। অথচ নিজের বাড়ি টিন দিয়ে ঘেরা। এলাকার এত মানুষকে ঘর পাইয়ে দিয়েও কেন নিজে এমন বাড়িতে থাকেন? উত্তরে আরতির বলেন, ‘সরকারি বাড়ির জন্য কোনওদিন আবেদন করিনি। আমার ভাইবোনরাও পায়নি। কী হবে, আমি তো আর গাছতলায় পড়ে নেই!’
এই বয়সেও রোজ বাসে, টোটোয় চড়ে চলে যান জেলা পরিষদের অফিসে। কোনো প্রতিকূলতাই ছুঁতে পর্যন্ত পারে না তার উদ্যমকে। শুধু নিজের দলেরই নয়, বিরোধীদের মুখেও শোনা যায় আরতিদেবীর প্রশংসা। তবে তৃণমূলের উপরমহল নাকি খোঁজ রাখেনা তার। তবে তাতে কী! নিজের আশেপাশের মানুষদের জন্য কাজ করে বেশ আছেন তিনি। না কোনো আক্ষেপ, আর না অভিযোগ। প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছেন তিনি।