বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০২১ সালের কঠিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে খাতা খুলতে ব্যর্থ হয়েছে সিপিএম তথা বাম শরিক দলগুলি। ভেঙে পড়েছে সংযুক্ত মোর্চার সমস্ত আস্ফালন। শুধু বামনায় খাতা খুলতে পারেনি কংগ্রেসও। তবে লাল শিবিরের এই চূড়ান্ত ব্যর্থতায় সিপিএম-এর ওপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ বাম শরিক দল গুলি। কেউ আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট নিয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন মহম্মদ সেলিমকে, কেউ আবার ঐতিহাসিক ভুল আখ্যা দিচ্ছেন বাম শিবিরের সামগ্রিক রণনীতিকেই।
ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২০১৬ সালেও কংগ্রেসের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেছিল সিপিএম। আমাদের জানানো হয়েছিল অনেক পরে। এবারও আইএসএফকে চাপিয়ে দেওয়া হল আমরা জানতেই পারলাম না। সব করে আমাদের বদনাম হলো। তারপর সিপিএম একাই ওদের সঙ্গে কথা বলল।”
আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট নিয়ে যখন জটিলতা তৈরি হয়েছিল বাম-কংগ্রেস তরফে, সে সময় হুগলীর বৈদ্যবাটির পার্টি অফিসে বৈঠকে বসেছিলেন মোহাম্মদ সেলিম, আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্য, নওশাদ সিদ্দিকীরা। এদিন এই বৈঠক নিয়েও নিজের ক্ষোভ উগরে দেয় নরেন চট্টোপাধ্যায়। নরেন বাবুর বাড়ি হুগলী বৈদ্যবাটিতেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই বৈঠকে তাকে ডাকা হয়নি। তিনি বলেন, “রেললাইনের একদিকে সিপিএমের পার্টি অফিস, আর একদিকে আমার বাড়ি। বৈদ্যবাটিতে বসে সেলিম-মান্নানদা আইএসএফ-এর সঙ্গে মিটিং করলেন আর আমরা জানলামই না।”
তবে একা মোহাম্মদ সেলিমের ঘাড়েই সমস্ত দোষ চাপাতে রাজি নন ফরওয়ার্ড ব্লকের এই বর্ষিয়ান নেতা। তার মতে, আমার পার্টিতে কি আমার একার কথায় কিছু হয়?সিপিএমের নিশ্চয়ই বিমানদা সূর্যবাবুর মত ছিল এসবে। তিনি এও বলেন, প্রতিটি বাম দলের কাছে বিমান বসুর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু এই নির্বাচনে তার ভূমিকাও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। বামফ্রন্ট সরকার থাকার সময়েও বড় দল হিসেবে ছোট ছোট শরিক দলগুলোর উপর দাদাগিরির অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বারবার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন ক্ষিতি গোস্বামী থেকে মঞ্জু কুমার মজুমদার সকলেই। আবারও সেই প্রকাশ্য সমালোচনায় বিদ্ধ হলো সিপিএমকে।
এমনিতেই প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা করে দলকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছেন তন্ময় ভট্টাচার্য, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নেতারা। সূত্রের খবর অনুযায়ী জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। হুগলি জেলার সম্পাদকমন্ডলীর বিরুদ্ধে গিয়ে জাঙ্গিপাড়া আসনে প্রার্থী করা হয়েছিল প্রাক্তন তৃণমূলী তথা বর্তমান আই এস এফ প্রার্থী সেখ নইমুদ্দীনকে। এ নিয়ে গণনার দিনই প্রকাশ্য ক্ষোভ জানিয়েছিলেন শীর্ষ নেতারা। বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের বৈঠক রয়েছে। যদিও সেখানে নির্বাচনী পর্যালোচনা হওয়ার সুযোগ কম। তবে যে যে এলাকায় ভোট পরবর্তী হিংসায় কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে নেতৃত্ব কিভাবে পৌঁছাতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। আক্রান্ত কর্মীদের পাশে কেন শীর্ষ নেতারা নেই এ নিয়ে আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকে। সবমিলিয়ে নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভ এবং শরিকি সমস্যা নিয়ে এই মুহূর্তে যথেষ্ট বিপাকে রয়েছে সিপিএম