বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: এক সময় মনে হচ্ছিলো দাঁড়াতেই পারবে না ফ্রান্স। গতবারের বিশ্বজয়ীদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করছিলো আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে প্রায় একার হাতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন এমবাপ্পে। ৮ বছর আগে ব্রাজিলের মারাকানায় অতিরিক্ত সময়ে গোৎজের গোলে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল লিওনেল মেসির। আজ যেন পুনরাবৃত্তি হতে চলেছিল সেই রাতের। কিন্তু ২০১৪-র রাতের সেই স্মৃতি ২০২২-এ কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে চিরতরে নিজের মন থেকে মুছে ফেললেন মেসি। নিজে দুইটি গোল করলেন এবং একটি গোলের মুভ তৈরি করলেন এবং রাতটিকে কেরিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় রাত করে রাখলেন।।
২০১৪ বিশ্বকাপের সেই ফাইনালে মাঠে নামা প্রথম একাদশের মধ্যে মেসি ছাড়া আর কোনও ফুটবলারই আর এই আর্জেন্টিনা দলে নেই। সেই ব্রাজিল বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন দি মারিয়াও। কিন্তু ফাইনালে তিনি নামতে পারেননি মাঠে। চোটের কারণে মাঠের বাইরে বসে তাকে অসহায়ভাবে দেখতে হয়েছিল দলের হার। অনেকেই মনে করেন সেদিন যদি দি মারিয়া মাঠে থাকতেন তাহলে আর্জেন্টিনা হয়তো জিতেই মাঠ ছাড়তো।
কেন তেমনটা মনে করা হয় সেটা আজ আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, ততক্ষণ বাঁ প্রান্ত থেকে বারবার ফ্রান্স ডিফেন্সকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেলেন। প্রথমার্ধে তাকে থামাতে গিয়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ ফ্রান্সের তারকা সাইড ব্যাক জুলিয়াস কুণ্ডে। মেসি যেই পেনাল্টি থেকে গোল করলেন সেটি অর্জন করেছিলেন দি মারিয়াই। এরপর মেসির তৈরি করা দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণ থেকে ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিসকে পরাস্ত করলেন তিনিই।
এইমুহূর্তে আর্জেন্টিনার ফুটবলে মেসির চেয়ে বড় তারকা হওয়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। চলতি বিশ্বকাপের প্রত্যেকটি নক-আউট ম্যাচে গোল করে মেসি বুঝিয়েও দিয়েছেন কেন সেই সম্মানের যোগ্য তিনি। কিন্তু আর্জেন্টিনা গত ২৮ বছরের খরা কাটিয়ে গত দু বছরে যে তিনটি ট্রফি ঘরে তুলেছে সেই তিনটি ফাইনালেই গোল করলেন দি মারিয়া। আর্জেন্টিনার সাম্প্রতিক সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারিগর যদি মেসি হন তাহলে দ্বিতীয় স্থানে দি মারিয়া ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করাই সম্ভব নয়।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল না খেলতে পারার যন্ত্রণা গোল করে এবং করিয়ে মুছে ফেলে দি মারিয়ার কান্নার দৃশ্যটা যতটা তৃপ্তিদায়ক ছিলো, ঠিক ততটাই আশ্চর্য ছিল প্রথমার্ধে ফ্রান্স দলের পারফরম্যান্স। তাদের মধ্যে লড়াই করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনটাই দেখা যায়নি। গোটা বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা কিলিয়ান এমবাপ্পে প্রথমার্ধে চূড়ান্ত ফ্লপ। একবারও ফ্রান্সকে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে দেখা যায়নি প্রথমার্ধে।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা চেষ্টা করেছিল গতবারের বিশ্বজয়ীরা। কিন্তু আর্জেন্টিনার ডিফেন্স যেন ধনুক ভাঙ্গা পণ করে নেমেছিল যে তারা কিছুতেই ফ্রান্সকে কোনওরকমভাবে ম্যাচে ফিরতে দেবে না। পেশাদারী দক্ষতায় ফ্রান্সের যাবতীয় চেষ্টাকে রুখে দিয়েছিল আর্জেন্টিনা। দুই অর্ধ মিলিয়ে খুব সামান্য সময়ই ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পেকে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছিল।
কিন্তু এমন সময় ম্যাচের ৮০ মিনিটে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি তিনি। তারপরেই ১ মিনিটের মধ্যে অসাধারণ সাইড ভলিতে গোল করেন তিনি। কিন্তু সেই গোল দুটি ফ্রান্সের হারকে শুধু একটু দেরি করিয়ে দিয়েছিল। এরপর অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দ্বিতীয়ার্ধে হুগো লরিসের সেভ করা শট থেকে লুজ বল থেকে গোল করলেন মেসি। এরপর শেষমুহূর্তে পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিক করে এমবাপ্পে খেলা পেনাল্টি শ্যুট আউট অবধি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু টাইব্রেকারে কোম্যানের পেনাল্টি বাঁচিয়ে আর্জেন্টিনাকে ট্রফি এনে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।