ভোট পরবর্তী হিংসার রিপোর্ট না মেলায় ফের একবার বাংলাকে সচেতন করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গতকাল রাজ্যপালের তত্ত্বাবধানে রাজভবনে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আর তারপরেই একের পর এক পুলিশ অফিসারের পোস্টিং বদল করতে শুরু করেন তিনি। যদিও বিজেপি কর্মীদের ওপর অত্যাচার এবং ভোট পরবর্তী হিংসা থামার কোনো নাম নেই, কিন্তু শপথ গ্রহণের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইলেকশন কমিশনের সমস্ত রদবদল করা অফিসারদের নিজের মতো করে বহাল করতে তৎপর তৃণমূল সুপ্রিমো। ভোটের মুখে মোট ২৯ জন পুলিশ অফিসারকে প্রয়োজনমতো বদলী করেছিল নির্বাচন কমিশন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, এই রদবদলের জেরেই রাজ্য জুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। আর সেই কথা মাথায় রেখেই শুরু হলো একের পর এক রদবদল।

২০ এপ্রিল শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন চারজন ভোটার। ক্ষমতায় ফিরেই এই ঘটনার উপর নজর দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো কোচবিহার জেলার এসপি দেবাশীষ ধরকে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দেবাশীষ ধরের জায়গায় কোচবিহার জেলায় পাঠানো হয়েছে কান্নানকে,যিনি নির্বাচনের সময় ওসিডব্লিউ ছিলেন। নির্বাচন কমিশন বদলী করেছিল ডিজি বীরেন্দ্রকেও। তাকেও আগের পদে বহাল করা হয়েছে। এছাড়া ডিজি (সুরক্ষা) বিবেক সহায়কেও তার পুরনো পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের বিরুলিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহত হলে বিবেক সহায়কে সরিয়ে দিয়েছিলো ইলেকশন কমিশন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, গত তিন মাস নির্বাচনের কারণে সমস্ত আইন-শৃঙ্খলা নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল, তাই কিছু অনিয়ম সংশোধন করা একান্ত দরকার।

ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা আক্রান্ত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তরফে বদলি বদলি করা হয়েছিল এসপি ভোলানাথ পান্ডেকে। তাকে এখন আলিপুরদুয়ারের এসপি পদে বহাল রাখা হয়েছে। এসপি সৌম্য রায়ের স্ত্রী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন ফের তাকে হাওড়ার(পল্লীর) এসপি হিসেবে বহাল করা হয়েছে।

তবে এত রদবদলের পরেও কমছে না ভোট পরবর্তী হিংসা। মঙ্গলবারই ফের একবার রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার বলি হলেন তিনজন। যার মধ্যে একজন ছিলেন সক্রিয় বিজেপি কর্মী। বাঁকুড়ার বিজেপি কর্মী অরূপ রুইদাসের নিখোঁজ হওয়ার খবর এসেছিল মঙ্গলবারই। বুধবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডখোষে তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়। গলায় দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তাকে। স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর অনুযায়ী তিনি ইন্দাস বিধানসভায় বিজেপির বুথ এজেন্ট ছিলেন। ভাটপাড়ার কাঁকিনাড়াতেও বিজেপি কর্মীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের ঘটনা সামনে আসে। ওই বিজেপি কর্মীর আজ বিশ্বাস জানান, তিনি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন তিনজন তার বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করছে। প্রচন্ড ভয়ে রয়েছে তার পরিবার। এই মুহূর্তে পুলিশ ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে গেলেও এলাকায় একই রকম আতঙ্ক বর্তমান। অন্যদিকে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে বিজেপি তাদের দুজন কর্মীকে খুন করেছে এমনটাই অভিযোগ করল তৃণমূল কংগ্রেস। এরই মধ্যে বাংলায় ভোট-পরবর্তী হিংসার একটি সার্বিক রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চেয়ে পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এখনো সেই রিপোর্ট না মেলায় আরো একবার বাংলাকে সচেতন করেছে এইচএমও। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যেখানে যেখানে বিজেপি জিতেছে সেই সব এলাকাতেই নানান রকম ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে।


Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর