বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিগত মাস খানেক ধরে অগণিত নারী নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় বাংলা। এরই মধ্যে আবারও সামনে এলো এক শিউরে ওঠার মতন ঘটনা। নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টার পর সপরিবারে খুনের হুমকি! আর তা সহ্য করতে না পেরেই ভয়ে, অপমানে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা কিশোরী। অভিযুক্ত শাসকদল ঘনিষ্ঠ বলেই জানা যাচ্ছে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি এলাকায়। আপাতত আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরী।
ঘটনার সূত্রপাত মাস দেড়েক আগে। জানা যাচ্ছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে একাই ছিল জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ধর্মপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকা। বাড়ি ফাঁকা দেখে স্থানীয় এক যুবক হঠাৎই ঢুকে পড়ে বাড়িতে। ছিঁড়ে দেওয়া হয় নাবালিকার জামাকাপড়, এমনকি হাত দেওয়া হয় তার গোপনাঙ্গেও। চলে ধর্ষণের চেষ্টা। কিন্তু আতঙ্কে ওই নাবালিকা আর্তনাদ করে ওঠায় লোকজন চলে আসার ভয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত।
ঘটনার পরই ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবার। পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তারও করে অভিযুক্তকে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই জামিন পায় সে। আর তারপরই এলাকা থেকে রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় ওই যুবক। কিন্তু বুধবার দুপুরে মুখ ঢেকে ওই নির্যাতিতা নাবালিকার বাড়িতে হাজির হয় অন্য দুই যুবক। এদিনও বাড়িতে একাই ছিল মেয়েটি। অভিযোগ ওই দুই যুবক এসে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। মামলা প্রত্যাহার না করলে নাবালিকার পরিবারের সবাইকে খুন করা হয়ে বলেও হুমকি দেয় তারা।
বুধবার এই সবের কিছুই বাড়ির কাউকে জানায়নি কিশোরী। বৃহস্পতিবার সকালে আর থাকতে না পেরে পরিবারকে সবকিছুই খুলে বলে সে। এরপরই দুপুর নাগাদ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে নাবালিকা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু যত সময় গড়ায় ততই আরও খারাপ হতে থাকে অবস্থা। তারপর তাকে স্থানান্তরিত করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে।
জানা যাচ্ছে, অভিযুক্ত যুবক স্থানীয় তৃণমূল নেতার ভাই। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সোচ্চার হয়েছে বিজেপি। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামীর অভিযোগ, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে পুলিস অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল না। উলটে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে গেল।’
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি পুলিস সুপার দেবর্ষি দত্ত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলে , ‘মাসখানেক আগে একটি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয় ময়নাগুড়ি থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস গ্রেফতার করে কোর্টে পাঠায় অভিযুক্তকে। এদিন ওই নাবালিকা গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হতে পারে।’ ঘটনার জেরে যে আবারও একবার তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, তা বলাই বাহুল্য।