বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সিআইডির (CID) নির্দেশ থাকলেও পড়ল না মোবাইল জমা। তদন্তের স্বার্থে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha) স্বামী প্রতাপচন্দ্র দে কে সোমবার ভবানী ভবনে মোবাইল ফোন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি ফোন জমা করেননি। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী গতকাল গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশ মতো ফোন জমা করেননি আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে।
সূত্র মারফত খবর, মোবাইলের বিষয়ে সিআইডি-কে চিঠি লিখে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন বিচারপতি সিনহার স্বামী। সম্প্রতি প্রতাপচন্দ্র দে-কে ফের তৃতীয়বারের জন্য তলব করে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। জমি সংক্রান্ত এক মামলায় অবৈধ ভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামীকে আগামী ২২ ডিসেম্বর তাকে ভবানী ভবনে সিআইডির সদর দফতরে ডাকা হয়েছে।
সোমবার তাকে ফোন জমা রাখারও নির্দেশ দেয় সিআইডি। তবে তদন্তকারীদের নির্দেশ মানলেন না বিচারপতির স্বামী। সূত্র মারফত খবর, এর আগেও এই মামলায় বিচারপতির স্বামীকে দুবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। এর আগে গত ১ ডিসেম্বর বিচারপতির স্বামীকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। এদিকে গত শনিবার তাকে দ্বিতীয় বারের জন্য ন’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ঘটনাচক্রে, বর্তমানে বিচারপতি সিনহার এজলাসেই চলছে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলা। যেই মামলায় কিছু দিন আগেই তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ের উৎস নিয়ে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বিচারপতি সিনহা। অভিষেকের সংস্থা ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ নিয়ে বিচারপতি সিনহার এজলাসে রিপোর্টও জমা দেয় ইডি। এরই মধ্যে বারে বারে বিচারপতি সিনহার স্বামীকে তলব রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তলব করায় একাধিক জল্পনা তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন: লাগাতার আন্দোলনের জের! সরকারি কর্মীদের DA নিয়ে সুখবর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
সিআইডি সূত্রে খবর, যে মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিচারপতির স্বামীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে সেটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। জানা গিয়েছে, একটি পৈতৃক জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ৬৪ বছরের এক বিধবা মহিলার সঙ্গে তার কিছু আত্মীয়ের বিরোধ শুরু হয়। ঝামেলার জেরে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তার দাদা এবং আত্মীয়রা। সেই ঘটনার প্রমাণও সিসিটিভিতে রয়েছে। এরপরই এই ইস্যুতে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। নিজের দাদা ও তার কিছু আত্মীয়দের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি মামলা করেছিলেন বিধবা বৃদ্ধা মহিলা।
‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই মামলায় বিবাদী পক্ষের হয়ে সওয়াল জবাব করছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামী। অভিযোগ নিজের প্রভাব খাঁটিয়ে নানাভাবে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন কলকাতা হাই কোর্টের মহিলা বিচারপতির স্বামী। এমনকি বিচারপতির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন ওই মহিলা ও তার মেয়ে।
এরপরই তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। যাতে আইনজীবী বা তার বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই দু’টি ফৌজদারি অভিযোগের যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, সেই জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান তারা। এদিকে শীর্ষ আদালতে করা আবেদনে এও জানানো হয়েছে, ওই দুই মামলার প্রাথমিক তদন্তে এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ারও হয়েছেন। তবে তার পরও তদন্তে বাধা দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে।
‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালতে দেওয়া হলফনামায় জানানো হয়েছে, ওই মামলায় তদন্তে থাকা অফিসারকে ডেকে নাকি এক বার ভর্ৎসনাও করেছেন বিচারপতি। ওই দু’টি দেওয়ানি মামলায় কেন ফৌজদারি মামলার তদন্ত হচ্ছে? এই প্রশ্নও তোলা হয়। গত নভেম্বর মাসে সমস্ত বিষয় শুনে এই ফৌজদারি মামলার তদন্তভার সিআইডির (CID) হাতেই রাখে সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকেও মুখবন্ধ খামে এই তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ৷
সেই সময় সিআইডিকে ভয় না পেয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। পরে অবশ্য এই মামলায় কোনও বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে সম্প্রতি আদালত জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ। তারপরই বিচারপতির স্বামীকে তলব করেছে সিআইডি।