2019 সালের 5 ই আগস্ট কেন্দ্র সরকারের দ্বারা কাশ্মীরে 370 ধারা বাতিল এবং এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর বিভক্ত হয়ে যায় দুই ভিন্ন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে । কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর উভয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে একাধিক ঝামেলার ঘটনা সামনে আসে। সেই ধারা প্রত্যাহারের পর পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উপলক্ষ্যে এদিন প্রথম কাশ্মীর সফরে এসে পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি। স্বভাবতই, এদিন জম্মুর সাম্বা থেকে মোদি কাশ্মীর বাসীর উদ্দেশ্যে কি বার্তা দেন, সেদিকেই নজর ছিলো সকলের।
এদিন পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “ভারতের গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হল আমাদের পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েত দ্বারা গঠিত শক্তিতেই ভবিষ্যতে আমাদের দেশের সকল বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি লুকিয়ে রয়েছে।” এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিবছর 24 শে এপ্রিল দিনটি পঞ্চায়েতি রাজ দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা করা হয়।
তিনি জানান, “পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উপলক্ষ্যে সকল মানুষকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রইল। ভারতের গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হল আমাদের পঞ্চায়েত। আমাদের লক্ষ্য হল একটি স্বনির্ভর ভারত গড়ে তোলা।” এছাড়াও এ দিন সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে পঞ্চায়েত গুলিকে আরো শক্তিশালী করে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। মোদি বলেন, “অমৃত সরোবর উদ্যোগের উদ্বোধন করার মাধ্যমে আমরা এখানকার জলাশয়গুলিকে পুনরুত্থান করব এবং জলের প্রতিটি বিন্দুকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করা হবে। এই প্রচেষ্টার দ্বারা এখানকার প্রতিটি জেলার অন্তর্গত একাধিক জলাশয়ের সমৃদ্ধি এবং পুনরুত্থান করা সম্ভব হবে।”
মোদি বলেন, “আমি এই জায়গায় নতুন নই। বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত। আজ আপনাদেরকে আমার জানাতে পেরে ভালো লাগছে যে, এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পর্কিত 20000 কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হতে চলেছে।” এছাড়াও তিনি বলেন, “বিগত বেশ কিছু দশক ধরে বাল্মিকী সমাজের ওপর যেভাবে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তা থেকে বর্তমানে তারা মুক্ত। এখন সকল পরিবারের ছেলে মেয়েরাই তাদের স্বপ্ন পূরণ করে চলেছে। এছাড়াও বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিটি পরিবার সংরক্ষণের সুবিধা পেয়ে চলেছে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আগামী 25 বছরের ভিতর জম্মু ও কাশ্মীর উন্নয়নের নতুন গল্প লিখতে চলছে। স্বাধীনতার সাত দশকে ধরে এখানে মাত্র 17,000 কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয় যা গত দুই বছরে প্রায় 38,000 কোটি টাকায় পৌঁছেছে।” এছাড়াও এদিন তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের নতুন প্রজন্মকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমি তোমাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে, তোমাদের বাবা-মা এবং পরিবার বিগত বেশ কিছু বছরে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, ভবিষ্যতে তোমাদের সেই সকল সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। তোমরা নিশ্চিত থাকতে পারো।”
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালেই আচমকা জম্মুর লালিয়ান গ্রামে বিস্ফোরণ ঘটে। মোদির সভাস্থল থেকে মাত্র 12 কিলোমিটার দূরে এই অঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া মাত্র সেখানে হাজির হয় প্রশাসন। ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে দেখার পর পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “এই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি কর্ম কাণ্ডের কোন সম্পর্ক নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে আমরা এ বিষয়ে কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাই না।” এরমাঝেই প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় প্রশাসন। তবে এসকল বাঁধাকে উড়িয়ে এদিন স্বাভাবিক ছন্দেই দেখা গেলো মোদিকে।