বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: গত মাসের ২০ তারিখে আরম্ভ হওয়া কাতার বিশ্বকাপ এসে দাঁড়িয়েছে নিজের অন্তিম লগ্নে। বাকি রয়েছে আর মাত্র চারটি ম্যাচ। তারপর আবার অপেক্ষা সাড়ে তিন বছরের। আজ থেকে আরম্ভ হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। প্রথম সেমিফাইনালে আজ লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া। ভারতীয় সময় রাত ১২.৩০ নাগাদ কাতারের লুসাইল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে গোটা বিশ্ব।
বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি দুই LM10। লিওনেল মেসি এবং লুকা মদ্রিচ, দুজনেই আধুনিক ফুটবল জগতের দুই কিংবদন্তি। মজার ব্যাপার হলো ২০০৬ সালের ১লা মার্চ যে ম্যাচে মদ্রিচের দেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল, সেই ম্যাচেই লিওনেল মেসি দেশের জার্সিতে নিজের প্রথম গোলটি পেয়েছিলেন। দুজনেই বর্তমানে কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন কিন্তু কারোরই খেলার ধার এখনো একটুও কমেনি। দুজনেই একবার করে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন এবং জিতেছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল। আজকের ম্যাচটি যে হারবে, সেটা তার আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্যাচও হতে পারে।
আর্জেন্টিনা চলতে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হারের মুখ দেখেছিল সৌদি আরবের কাছে। কিন্তু সেই হার একপ্রকার শাপে বর হয়ে গিয়েছে গোটা আর্জেন্টিনা দলটির জন্য। এরপর থেকে আর্জেন্টিনার পারফরমেন্সে অনেক উন্নতি ঘটেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এটাই যে তারা এখন একটি দল হিসেবে মাঠে নামে এবং কোন নির্দিষ্ট ফুটবলারের ওপর নির্ভরশীল নয়। আর্জেন্টিনার এই বদলে যাওয়া মানসিকতাই মেসিকে আরো মন খুলে নিজের কাজটা করার স্বাধীনতা দিচ্ছে। যার জন্য ‘শেষ ১৬’ পর্বে অস্ট্রেলিয়া এবং কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে তার পারফরম্যান্স ছিল রীতিমত চোখে পড়ার মতো। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধেও নিজের ভালো পারফরমেন্সের ধারা অব্যাহত রাখতে চাইবেন মেসি।
অপরদিকে ক্রোয়েশিয়া নিজেদের গ্রুপে বেলজিয়ামের মতো দলকে পেছনে ফেলে নকআউট পর্বের যোগ্যতা অর্জন করেছিল। শেষ ১৬ পর্বে তারা জাপানের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে পিছিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত কামব্যাক করে তারা এবং পেনাল্টি শ্যুট আউটে গিয়ে ম্যাচটি জেতে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ৯০ মিনিট সময়ে অবধি ম্যাচটি ড্র থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের কোলে ব্রাজিল এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অন্তিম লগ্নে পেটক অফিসার গোলে দুর্দান্ত ভাবে সমতায় ফেড়ে ক্রোয়েশিয়া এবং আবারও তারা পেনাল্টি শুট আউটে ম্যাচটি জেতে। মদ্রিচ, কোভাসিচ, ব্রজোভিচ সমৃদ্ধ ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ যে কোনও কোচের কাছে গর্বের কারন। ডিফেন্সও রয়েছে অসাধারণ ফর্মে। গোলরক্ষক লিভাকোভিচ প্রতিদিন অসাধারণ পারফরম্যান্স করছেন। কিন্তু আক্রমণে অনেকটাই তারা নির্ভর করে তারকা ফুটবলার পেরিসিচের ওপর। মারিও মঞ্জুকিচের মতো স্ট্রাইকারের অভাব এখনও পূরণ করতে পারেনি তারা।
এমন অবস্থায় দুই দলই আজকে চাইবে ম্যাচটি টাইরেকর্ডটি না গড়াক। লিভাকোভিচ এবং আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজ দুজনেই এই একটি কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তাই দুই দলের কচি চাইবেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নিজেদের ডিফেন্সকে জমাট রেখে যদি কোনও ভাবে জয় তুলে নেওয়া যায়। আক্রমণ ভাগ ক্রোয়েশিয়ার কাছে একটি সমস্যার ব্যাপার। কিন্তু আর্জেন্টাইন ডিফেন্স লং বল কিম্বা ক্রসের সামনের সমস্যায় পড়েছে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে। ক্রোয়েশিয়া ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে তারা জানে আর্জেন্টিনা কোন বিষয়গুলিতে বেশি শক্তিশালী এবং তারা নিজেদের শক্তিশালী জায়গা গুলি কি আরও শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। আর্জেন্টিনা শিবির থেকে ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে কিন্তু তারা নিজেদের স্বাভাবিক খেলাই খেলবে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।