বাংলা হান্ট ডেস্ক: দশমীর রাতে একদিকে যখন উমার ফিরে যাওয়ার দুঃখে বিহ্বল ছিলেন সবাই ঠিক তখনই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রতিমা বিসর্জনের সময়ে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) মালবাজারের মাল নদীতে হঠাৎই আসা ভয়াবহ হড়পা বানের মুখোমুখি হতে হয় কয়েক হাজার মানুষকে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় সর্বত্ৰ নেমে আসে এক শোকের ছায়া। তবে, ওই দুর্ঘটনায় এক যুবক বাঁচিয়ে দেন ১০ জনের প্রাণ।
জানা গিয়েছে, দশমীর সন্ধ্যায় মাল নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে এসেছিলেন প্রায় আট হাজার মানুষ। ডুয়ার্সের মালবাজার শহর সংলগ্ন বিভিন্ন চা-বাগান এলাকা থেকে পুজো উদ্যোক্তারা তাঁদের প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন দিতে আসেন নদীতে। আর সেই দৃশ্য দেখতেই ভিড় জমিয়েছিলেন সকলে। তাদের মাঝেই উপস্থিত ছিলেন তেশিমলা গ্রামের মহম্মদ মানিক নামের এক যুবক।
এদিকে, প্রতিমা বিসর্জন চলাকালীনই আচমকাই নদীতে হড়পা বান চলে আসে। ঘটনার আকষ্মিকতায় জল থেকে ওঠার আগেই ভেসে যান বেশ কয়েকজন। এমতাবস্থায়, বিপদ বুঝতে পেরে কোনো কিছু না চিন্তা করেই জলের স্রোতে ভেসে যাওয়া মানুষদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মানিক। প্রায় ১৫ ফুট উঁচু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তিনি ১০ জনের প্রান বাঁচাতে সক্ষম হন।
তবে, ওই উদ্ধারকাজের সময় মানিক পায়ে আঘাত পান। রাতেই তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে, ভয়াবহ বিপদে কার্যত “ত্রাতা”-র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া মানিক তাঁর এই মহতী কাজের জন্য এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। সকলেই একবাক্যে তাঁকে কুর্ণিশও জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মর্মান্তিক ঘটনায় মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, উদ্ধার করা হয়েছে ৮০ জনেরও বেশি মানুষকে। ইতিমধ্যেই গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে অনেকে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা। পাশাপাশি, এই ঘটনার জেরে জলপাইগুড়িতে এই বছর বাতিল হয়েছে পুজো কার্নিভাল। দুর্ঘটনার পর বৃহস্পতিবার পুজো কার্নিভাল আদৌ হবে কি না এই নিয়ে বৈঠকে বসেছিল জেলা প্রশাসন। সেখানেই জলপাইগুড়িতে চলতি বছরের পুজো কার্নিভাল বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, ‘‘মানুষ যখন চাইছেন না, তখন এই রকম একটা অনুষ্ঠান করার কোনো মানে হয় না। তাই, পুজো কার্নিভাল বাতিল করা হয়েছে।’’