বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: লখনউয়ের এই প্রচণ্ড গরমে তোপখানা বাজারের যে সরু রাস্তায় সবজির গাড়ি ভিড় বসায় সেখানে জুমার নামাজের আগে বরাবরের মতো কায়সারের গাড়িতেও ভিড় ছিল। একই সময়ে প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মহিলা জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে, তার মেয়ে মুমতাজ খান খেলার ১১ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষককে টপকে একটি গোল করেন। মুমতাজের এই গোলই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ভারতের জয়ের ভিত তৈরি করে। এই ম্যাচে ভারত ৩-০ ফলে কোরিয়াকে হারিয়েছে।
তবে বিশ্বকাপে মেয়ের এই দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখতে পারেননি সবজি বিক্রি করা কায়সার। তার এই গোলের জন্য ম্যাচ সেরার খেতাব পান মুমতাজ। তবে মেয়েকে খেলতে না দেখার আফসোস নেই মায়ের। কায়সার জাহান বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক ঘটনা আসবে যখন তিনি তার মেয়েকে গোল করতে দেখবেন।
ইংরেজি সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে আলাপকালে সবজি বিক্রেতা কায়সার জাহান বলেন, “এটা আমার রোজগার জীবনে ব্যস্ততার সময় ছিল। অবশ্যই মেয়েকে গোল করতে দেখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমাকেও রোজগার করতে হবে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে এরকম আরও অনেক মুহূর্ত আসবে যখন আমি আমার মেয়েকে গোল করতে দেখব।” মহিলা হকির জুনিয়র লেভেলের বাইরে যাত্রা যথেষ্ট কঠিন ছিল। কিন্তু মমতাজের ভেতরের গতি, সামর্থ্য ও প্রতিভা দেখে মনে হয় তিনি সিনিয়র পর্যায়ে দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন। জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে ভারত এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচ জিতেছে, যেখানে মুমতাজের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।
জুনিয়র মহিলা হকি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৬ গোল করেছেন মুমতাজ খান। এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি গোল করা তৃতীয় খেলোয়াড় তিনি। ওয়েলসের বিরুদ্ধে ভারতের উদ্বোধনী ম্যাচে গোল করেছিলেন তিনি। এরপর জার্মানির বিপক্ষে গোল করতে সফল হন তিনি। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে চাঞ্চল্যকর হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ৮ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে খেলায় মুমতাজ তার প্রথম গোলে ভারতকে এগিয়ে দেন। তার পারফরম্যান্স নিয়ে মুমতাজের বোন ফারাহ বলেন, আজ আমরা কেমন অনুভব করছি তা বলা কঠিন। মেয়েটিকে খেলতে দেওয়ায় কিছু লোক আমার বাবা-মাকে কটূক্তি করেছিল। মা কায়সার জাহান বলেন, আমরা সব সময় মানুষের এ ধরনের কথা উপেক্ষা করতাম। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে মমতাজ সেই লোকদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন।