বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক সফল মানুষের সফলতার নেপথ্যে থাকে এক অদম্য লড়াই। যে লড়াইয়ের মঞ্চে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখেই উত্তরণের কাহিনি রচিত করেন তাঁরা। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক সেইরকমই একজনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি দারিদ্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই আজ তৈরি করেছেন নিজের পরিচিতি। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকার সাম্রাজ্য।
শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে:
মূলত, আজ আমরা সরথ বাবুর প্রসঙ্গ সবার সামনে তুলে ধরব। চেন্নাইয়ের মাদিপাক্কামের এক দরিদ্র দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সরথ বস্তিতে থাকতেন। তাঁর পরিবারে দুই বড় বোন এবং দুই ছোট ভাই ছিল। এমতাবস্থায়, পুরো পরিবারকে লালন-পালনের দায়িত্ব এসে পড়ে সরথ বাবুর মায়ের ওপর। তাঁর মা একটি স্কুলে মিড-ডে মিলের রাঁধুনি হিসাবে কাজ করতেন। পাশাপাশি, তাঁর মাসিক বেতন ছিল মাত্র ৩০ টাকা। এমতাবস্থায়, এই সামান্য বেতনে সন্তানদের ভরণপোষণ করতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয় তাঁকে।
শিক্ষার ভিত্তিতে অগ্রগতি:
এমতাবস্থায়, সরথ সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি যে করেই হোক তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি, তিনি চেয়েছিলেন ভালো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে। যাতে তিনি ভালো একটি চাকরি পেয়ে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে পারেন। এমতাবস্থায়, তাঁর এক বন্ধু তাঁকে পিলানিতে অবস্থিত বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (বিআইটিএস) সম্পর্কে জানান। শুধু তাই নয়, সরথ বুঝেছিলেন যে, এখানে পড়লে তিনি চাকরি পাবেন।
তারপর সরথ দিনরাত পরিশ্রম করে এই কলেজে ভর্তি হন। যদিও, সেখানে আবার কলেজের ফি একটা প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি, একটা সময়ে এর জন্য সরথের বোনকে তাঁর গয়না বন্ধক রেখে ফি’র টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছিল। এদিকে, বিআইটিএস পিলানি থেকে ডিগ্রি শেষ করার পর, সরথ চেন্নাইয়ের পোলারিস সফটওয়্যার ল্যাবসে চাকরি পান। তারপর তিনি ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি পাওয়ার আশায় আইআইএম-এ ভর্তি হবেন বলে মনস্থির করেন এবং ক্যাট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। শুধু তাই নয়, তৃতীয় প্রচেষ্টায় তিনি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
নিজের ব্যবসা শুরু করলেন:
আইআইএম আহমেদাবাদে ভর্তি হওয়ার পরে, তিনি একাধিক চাকরির প্রস্তাব পান। এমনকি, সেগুলির স্যালারি প্যাকেজ ছিল প্রায় লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু সরথ চাকরির পথে না হেঁটে বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন। তারপরেই তিনি ফুড সাপ্লাইয়ের ব্যবসায় নামার কথা ভাবেন। এমতাবস্থায়, সরথ ২০০৬ সালে এক লক্ষ টাকা দিয়ে তাঁর কোম্পানি শুরু করেন এবং ফুড কিং ক্যাটারিং সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের নামে পথচলা শুরু করেন।
প্রথমদিকে, সরথের এই সংস্থাটি কফি, চা এবং জলখাবার সরবরাহকারী সংস্থাগুলির সাথে কাজ করত। এরপর ধীরে ধীরে তাঁরা নতুন ও বড় কোম্পানির অর্ডার পেতে থাকেন। একটা সময়ে সরথ ফুড কিং ক্যাটারিং নামে দেশের একাধিক জায়গায় রেস্তোরাঁ খুলতে শুরু করেন। আর সেখানেই সাফল্য পেয়ে আজ তিনি প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন।