বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার! ২০১৯ সালে বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপির হঠাৎ উত্থান। যখন চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল তৃণমূলের (Trinamool Congress), সেই সময় কান্ডারি হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। নামটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সমস্ত ভয়-ডর উপেক্ষা করে মেরুদন্ড সোজা রেখে লড়াই। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম, জেলায় জেলায় মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন ‘যুবরাজ’। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের সেই পরিশ্রমের ফলও পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৯ থেকে ২০২৪, মাঝে কেটে গেছে অনেকটা সময়। বহু ঝড় ঝাপটা সবটা সামলে দলকে আগলে সামনে থেকে লড়াই লড়েছেন সেনাপতি। ইডি থেকে সিবিআই কোনো কিছুই ঝোকাতে পারেনি তাকে। তবে এতকিছুর পরও দলের মধ্যেই কি কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তাকে?
গতকালের সিদ্ধান্ত তুলে দিয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন…
পর্বতের মূষিক প্রসব! তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক, আর তার নির্যাস সকলের কাছে জলের মতো স্পষ্ট। অভিষেকের ‘অভিষেক’ তো দূর, জাতীয় স্তরে মুখপাত্রের পদই একমাত্র পড়ে রইল তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের ঝুলির এককোণে।
তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব বহুদিন ধরে চলছিল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতিতে নবীনের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে কি না, সে নিয়েও চর্চা চলছিল। কিন্তু কোথায় কি! নবীনের সংখ্যা বৃদ্ধি তো দূর, উল্টে বৈঠক শেষে দেখা গেল প্রবীণদের প্রতিনিধিত্বই বৃদ্ধি পেল। শোনা যাচ্ছিল দলে বড় ধরনের রদবদলের জন্য হাঁটছেন অভিষেক। যেমন বেশ কিছু প্রবীণ নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। তবে সেখানেও ধাক্কা। অভিষেকের পাশাপাশি এক চুলও গুরুত্ব পেল না ‘যুবরাজের’ চাওয়া-পাওয়া।
এদিকে প্রবীণদের প্রথম সারিতে রেখে দলের রাশও নিজের হাতেই রাখলেন মমতা। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত মারফত মমতা জানিয়ে দিলেন দলের অন্দরে যতই ‘ভিন্ন দাবি’ উঠুক না কেন, শেষ কথা তিনিই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অভিষেককে উপমুখ্যমন্ত্রী করে তার হাতে পুলিশ দফতর দেওয়ার পক্ষে সওয়াল উঠছিল তৃণমূলের কোনো কোনো নেতা তরফেই। তবে গতকালের বৈঠকের পর ২০২৬ এর আগে পর্যন্ত সেসব দুরস্ত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের গ্রেফতার! আরও বিপদ বাড়ল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের?
অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বটে কিন্তু গতকালের বৈঠকে যা ঠিক হয় তাতে অভিষেকের নাম রয়েছে দিল্লির মুখপাত্রদের তালিকায়। এখানেও বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে দিল্লি কেন? তাহলে কি অভিষেককে বাংলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? যদিও সোমবার কালীঘাটের হাইভোল্টেজ বৈঠক শেষে মন্ত্রী চন্দ্রিমা বলেন, অভিষেক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। উনি সব বিষয় নিয়েই বলবেন। তাহলে আলাদা করে তার নাম দিল্লির মুখপাত্রদের তালিকায় দেওয়ার মানে কি?
আরও পড়ুন: বিধানসভায় আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা! পাশে দাঁড়িয়ে নয়া কর্মসূচি ঘোষণা শুভেন্দুর! বললেন…
‘জনগর্জন’, নবজোয়ার থেকে বকেয়া আদায়ে দিল্লিতে ধর্না, তৃণমূলের টানা বঙ্গ জয়ে তার পরিশ্রম অস্বীকার করার মতো নয়। বিজেপিকে দুরমুশ করে ২০১৯ সালে তৃণমূলের সফল অধ্যায়ের অন্যতম কান্ডারি অভিষেক। তার ‘ক্ষমতা’ই খর্ব করা হচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে? প্রশ্ন উঠছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
বিগত কিছু সময়ে মূলত সম্প্রতি আর জি করের ইস্যুর পর দলের অন্দরেই দাবি করা হচ্ছিল পরের মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়া। অভিষেক অনুগামীদের আওয়াজ জোড়ালো হচ্ছিল। তবে গতকালের বৈঠকের পর সেসবে যেন কার্যত লাগাম পরিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। পরিষ্কার করলেন ২৬ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী তিনিই। হয়তো তার পরেও…