বাংলাহান্ট ডেস্ক: হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের জেরে বিপর্যয় নেমে এসেছে আদানি গ্রুপের উপর। বিশ্ব জুড়ে বণিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক। গৌতম আদানি (Gautam Adani) কি সত্যিই শেয়ারে কারচুপি করেছিলেন? হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের রিপোর্টে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে কারচুপি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো, অর্থপাচার ও করদাতাদের অর্থ চুরির মতো গুরুতর অভিযোগ। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে আদানির শেয়ারের উপর।
গত এক সপ্তাহে রেকর্ড পতন হয়েছে আদানি গ্রুপের (Adani Group) শেয়ারে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই এই গোষ্ঠীর অধীনে থাকা সাতটি সংস্থার শেয়ারের দামে পতন হচ্ছে। এর জেরে এই ক’দিনে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে গৌতম আদানির। গত এক সপ্তাহে আদানি গ্রুপ প্রায় ৮ লক্ষ ২২ হাজার কোটি টাকার লোকসান করেছে। শুধু তাই নয়, এক সময়ে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তিন নম্বরে ছিলেন গৌতম আদানি। পাশাপাশি, ভারত তথা এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন তিনি।
কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের (Hindenburg Research) রিপোর্ট বিতর্কের জেরে স্থানাচ্যুত হয়েছেন এই ধনকুবের। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইন্ডেক্স (Bloomberg Billionaire Index) অনুযায়ী, এখন বিশ্বের ২১ তম ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি। মাত্র এক সপ্তাহে তৃতীয় স্থান থেকে এতটা নীচে নেমে যাওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এছাড়াও এশিয়ারও তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তির স্থানে নেমে গিয়েছেন তিনি। এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তির স্থানে উঠে এসেছেন তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani)।
শুধু তাই নয়, রিলায়্যান্স গ্রুপের (Reliance Group) চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি এখন ভারতেরও সব থেকে ধনী ব্যক্তি। গত বছর থেকেই সম্পত্তির নিরিখে গৌতম আদানির থেকে পিছিয়ে পড়ছিলেন মুকেশ আম্বানি। গত এপ্রিল থেকেই আম্বানির এই পতন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক বিতর্কের জেরে ফের আদানিকে টেক্কা দিলেন আম্বানি। ফোর্বসের বিলিয়নেয়ার তালিকাতেও (Forbes Billionaire List) তিন নম্বর থেকে ১৬ তম স্থানে নেমে গিয়েছেন গৌতম আদানি। আজও বাজারে আদানি গ্রুপের অধীনস্থ সংস্থাগুলির শেয়ারের দামের পতন অব্যাহত।
ফোর্বস জানিয়েছে, বিশ্বের সেরা ১০ ধনীতম ব্যক্তির তালিকায় নবম স্থানে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পত্তি ৮৩.৭ বিলিয়ন ডলার। গৌতম আদানি যে সময়ে বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তি ছিলেন, তখন তাঁর মোট সম্পত্তি ছিল ১২০ বিলিয়ন ডলার। শুধু ২০২২-এই তাঁর সম্পত্তি ৪৪ বিলিয়ন ডলার বেড়েছিল। তবে বিগত এক সপ্তাহে হু হু করে উবে গিয়েছে তাঁর সম্পত্তি। বর্তমানে গৌতম আদানির সম্পত্তির পরিমাণ ৭৫.১ বিলিয়ন ডলার। এই মুহূর্তে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হলেন বার্নার্ড আরনল্ট (Bernard Arnault)।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে আদানি গ্রুপ। তবে তাতেও তাদের ক্ষতি আটকানো যায়নি। হিন্ডেনবার্গের ১০৬ পাতার রিপোর্টের জবাবে ৪১৩ পাতার একটি রিপোর্ট পেশ করেছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপে অধীনে রয়েছে আদানি এন্টারপ্রাইসেস (Adani Enterprises), আদানি গ্রিন এনার্জি (Adani Green Energy), আদানি পোর্টস অ্যান্ড সেজ (Adani Ports and SEZ), আদানি ট্রান্সমিশন (Adani Transmission), আদানি টোটাল গ্যাস (Adani Total Gas), আদানি পাওয়ার (Adani Power) এবং আদানি উইলমার (Adani Wilmar)। গত এক সপ্তাহে এই সব ক’টি সংস্থার শেয়ারের দামেই পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। এছাড়াও বাজারে তাদের FPO বাতিল করেছে আদানি গ্রুপ।