বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত শুক্রবার থেকে শিরোনামে রয়েছে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad Violence)। সামনে এসেছে লুটপাট, অত্যাচারের হৃদয়বিদারক ছবি। অশান্তির আবহে সর্বস্ব খুইয়েছে বহু পরিবার। বাংলা হান্টের (Bangla Hunt) সামনে এবার সেই কাহিনীই তুলে ধরলেন বেতবোনা গ্রাম নিবাসী এক মহিলা। জমি বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সঞ্চিত ৭ লক্ষ টাকা, পৌনে চার ভরি সোনা নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। প্রায় ৯ দিন ধরে আধপেটা খেয়েই দিন কাটাচ্ছে বেতবোনা গ্রামের বানু মণ্ডলের পরিবার।
অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বানুর স্ত্রী (Murshidabad Violence)
বাংলা হান্টের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে বানুর স্ত্রী বলেন, গত শুক্রবার ঘটনার সূত্রপাত। শনিবার তা বিরাট আকার নেয়। গ্রাম প্রায় ছারখার করে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বানুর স্ত্রী বলেন, অশান্তির সময় ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘরে ছিলেন। সেই সময় হামলাকারীরা এসে হুমকি দেয়, তোমাদের যা আছে দাও, নাহলে সবাইকে শেষ করে দেব।
প্রাণ বাঁচাতে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সঞ্চিত ৭ লক্ষ টাকা, মেয়ের বিয়ের জন্য তৈরি করা পৌনে ৪ ভরির গয়না হামলাকারীদের হাতে তুলে দেন বানু মণ্ডলের স্ত্রী। ঘটনার (Murshidabad Violence) বর্ণনা দিতে গিয়ে এদিন কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। প্রায় বুজে আসা গলায় প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের জীবনটা বড় নাকি সোনাদানা, টাকাপয়সা বড়?’
আরও পড়ুনঃ ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী ঝড়! দক্ষিণবঙ্গের ৬ জেলায় ঝেঁপে বৃষ্টির পূর্বাভাস! আবহাওয়ার খবর
কতজন হামলা চালিয়েছিল জিজ্ঞেস করায় বানুর স্ত্রী বলেন, প্রায় হাজার হাজার লোক এসেছিল। হামলাকারীরা সব নিয়ে চলে গিয়েছে বলে জানান তিনি। প্রশ্ন করেন, ‘আমরা খাব কী? আমাদের তো সব নিয়ে চলে গিয়েছে’।
বানুর স্ত্রী এদিন জানান, তাঁর মেয়ের হৃদযন্ত্রে (হার্ট) ফুটো রয়েছে। মেয়ের যখন মাত্র তিন মাস বয়স, তখনই একথা জানতে পারেন তাঁরা। সেই চিকিৎসার জন্য ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে দেন। ডাক্তার দেখাচ্ছিলেন, টাকা সঞ্চয় করছিলেন। অশান্তির মধ্যে সঞ্চিত ৭ লক্ষ টাকা নিয়ে চলে যান দুষ্কৃতীরা। মেয়ের বিয়ের জন্য অল্প অল্প করে তৈরি করা সোনার গয়নাও নিয়ে গিয়েছে হামলাকারীরা। ‘আমার সব নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে, আমার কিছু নেই’, কাঁদতে কাঁদতে বলেন বানুর স্ত্রী।

হামলার ঘটনার সময় পুলিশ (West Bengal Police) কোথায় ছিল? জবাবে বানুর স্ত্রী বলেন, ‘কয়েকজন পুলিশ ছিল। তবে হাজার হাজার লোককে থামাতে পারেনি… শনিবার সন্ধ্যাবেলায় পুলিশ আসে। আমরা সকাল থেকে সারাদিন ওদের সঙ্গে লড়াই করছি। আর পারছি না’।
আরও পড়ুনঃ নতুন জীবন শুরু করেছেন দিলীপ ঘোষ! নবদম্পতিকে শুভেচ্ছায় ভরালেন অভিষেক, লিখলেন, ভালোবাসায়…
বেতবোনার (Betbona Village) বর্তমান পরিস্থিতি কেমন জিজ্ঞেস করায় বানু মণ্ডলের ঘরণী বলেন, ‘বাড়ি ঘর ছেড়ে, না খেয়েদেয়ে গোটা গ্রামের লোক বসে আছে। রাজ্যপাল আসছেন। আমরা ক্যাম্প ছাড়া বাঁচতে পারছি না। আমরা একটা ক্যাম্প চাই’।
এদিন অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে সাহায্যের আর্জি জানান বানুর স্ত্রী (Murshidabad Violence)। তিনি বলেন, ‘মেয়েটাকে নিয়ে আমি কীভাবে থাকব? বাড়িতে কিচ্ছু নেই… আপনারা কিছু ব্যবস্থা করুন’। কান্নাভেজা গলায় বানু-ঘরণী বলেন, ‘সকাল থেকে না খেয়ে আছি। শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছে… শুক্রবার থেকে ৯ দিন ধরে একবেলা খাচ্ছি, দু’বেলা না খেয়ে থাকছি। একটা কাপড় পরেই ৮-৯ দিন ধরে রয়েছি’।