মানবতার নজির গড়ল গৃহবধূ, রোজা ভেঙ্গে জোত্স্নাকে বাঁচালেন মুসলিম বধূ

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’। জাত-পাত ভুলে সম্প্রীতির নজির গড়ল এক মুসলিম গৃহবধূ। ঘটনাটি  ঘটেছে নদিয়ার( Nadia) রানাঘাটে(Ranaghat) । রোজা ভেঙে হিন্দু ঘরের এক পৌঢ়াকে রক্ত দিলেন এক বধূ। বধূর নাম জোৎস্না রায় (৬০)। বাড়ি রানাঘাট থানার  অন্তর্গত ডিসপেন্সারি লেনে (Dispensary Lane)। তাঁর স্বামী রবীন্দ্রনাথ রায় মারা গেছেন  দুবছর আগে। কয়েক মাস ধরে  তিনি  কিডনির রোগে আক্রান্ত। মাসে তিন বার জোৎস্নাদেবীর  ডায়ালাইসিস করতে হয়। দু’মাস আগে বাড়িতেই পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান। ইদানিং জোৎস্নাদেবীর শরীরের অবস্থা যথেষ্টই সংকটজনক হতে শুরু করে। রানাঘাটের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় তাঁকে।

corona 2004110303 20200412014705

নার্সিংহোমে ভর্তি করার পরই চিকিৎসকরা জানান  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জোৎস্না রায়কে রক্ত  দিতে হবে।  তাঁর রক্তের গ্রুপ O+। করোনার  জেরে রাজ্যজুড়ে  বিভিন্ন হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্কে  রক্তের সংকট।  মায়ের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়  জোৎস্নাদেবীর বিবাহিত মেয়ে বিশাখা পান্ডেকে। বিভিন্ন জায়গায় রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে লকডাউনের সময় মায়ের জন্য রক্ত জোগাড় করতে পারেননি তার মেয়ে বিশাখা পান্ডে ।

coronavirus testing everlywell

এই অবস্থায় একটি সংগঠনের সন্ধান পান জোৎস্নাদেবীর মেয়ে। রানাঘাটে এই সংগঠনটি তৈরি হয়েছে করোনা মোকাবিলার জন্য। এই সংগঠনের কাজ হল করোনার সময় চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে  সাহায্য করা। কোন জায়গায় রক্ত  না পেয়ে ওই সংগঠনটির কাছে মায়ের 0+ রক্তের জন্য  লিখিত আবেদন করেন জোৎস্নাদেবীর মেয়ে বিশাখা পান্ডে। সেই সংগঠনের এক সদস্যা রুম্পা খোন্দকার। বাড়ি রানাঘাট থানার  কামারপাড়ায়। রক্তের জন্য মায়ের মত এক বৃদ্ধার প্রাণ সংশয়। এটা জানতে পেরেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রুম্পা খোন্দকার। তার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে জোৎস্নাদেবীর রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়াতে  তিনি নিজেই রক্ত দিতে সম্মত হন।

o 2

গত ১৬ দিন ধরে রোজা করে আসছেন রূম্পা খোন্দকার। রোজা ভাঙতে আরও ১৪ দিন বাকি ।  কিন্তু  ১৪ দিন বাকি থাকতেই রোজা ভেঙে সংকটজনক জোৎস্না রায়কে রক্ত দিলেন মুসলিম গৃহবধূ রুম্পা।  রানাঘাট হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই রক্ত দিতে দিতে  রুম্পা জানান , ” রক্তের রং একটাই লাল। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হিন্দু বা মুসলিম এই ভেদাভেদ  করা উচিত  নয়।  রোজা আগামী  বছরও করতে পারব। কিন্তু এক বোতল রক্ত দিয়ে  এক মুহূর্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে অনেক বেশি পূণ্য অর্জন করেছি।” পাশাপাশি মায়ের প্রাণ বাঁচানোর পর রুম্পা খোন্দকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে  জোৎস্না রায়ের মেয়ে বিশাখা পান্ডে জানান, “রক্তের কোন ধর্ম বা জাত হয় না। রুম্পা আজ সমাজের বুকে সেটা প্রমাণ করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এটা  সব ধর্মের মানুষকে সঠিক দিশা দেখাবে। ”

রক্ত দেওয়ার পর জোৎস্নাদেবীর শারীরিক অবস্থা সামান্য স্থিতিশীল হলে বিপদমুক্ত নয় । তবে জোৎস্নাদেবীর দুই মেয়ের চেষ্টা যাতে বিফলে না যায় সেই প্রার্থনা করেছেন দুই পরিবারের সদস্যরা ।


সম্পর্কিত খবর