‘ক্রমাগত উন্নয়নের ধুলোয় চাপা পড়ছে সবুজায়ন!’ রাজ্যকে সতর্কতা জারি করল জাতীয় পরিবেশ আদালত

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মহানগরী! যেদিকেই নজর পরবে ছেয়ে গেছে পাহাড়প্রমান অট্টালিকা। উঁচু উঁচু ইমারত, শপিং মল, প্রশস্ত রাস্তাঘাট। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই ‘দূষণের শিরোপা ‘ অর্জন করেছে তিলোত্তমা। হেলথ এফেক্ট ইনস্টিটিউটের স্টেট অফ গ্লোবাল এয়ার-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির তালিকায় দু নম্বরে স্থান করে নিয়েছে শহর কলকাতা। অর্থাৎ, গড় বার্ষিক দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি ও কলকাতা এখন বিশ্বের সব থেকে দূষিত শহর। এবার গোটা রাজ্যকে দূষণ বিষয়ক সতর্কতা জারি করল পরিবেশ আদালত।

রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে সম্প্রতি সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে পরিবেশ আদালতের চার বিচারপতির বেঞ্চ। যেখানে স্পষ্টই জানানো হয়েছে, নিছক নিয়মরক্ষার নয়, দূষণ রুখতে ও প্রকৃত সবুজায়নের স্বার্থে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এবং সরকার পোষিত নিগম ও পর্ষদগুলিও যেন বিশেষ সতর্ক থাকে। অন্যদিকে, রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘সবুজায়নের দিকে নজর রেখেই কলকাতা বা শহর লাগোয়া বিভিন্ন স্মার্ট সিটি গড়ে তুলছে রাজ্য সরকার।’’ তবে সে আশ্বাসে অবশ্য আসস্ত হওয়া যাচ্ছে না কলকাতা ও তার লাগোয়া এলাকার নগর-উন্নয়ন সংক্রান্ত দু’টি সাম্প্রতিক রিপোর্ট দেখে।

সম্প্রতি, পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন)- এর এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুর এমনকি খড়্গপুরের মতো শহরে দূষণের মাত্রা অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’ স্তরে। আইইউসিএন এর দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উন্নয়নের নামে রাজ্যে যে ‘কর্মযজ্ঞ’ চলছে তা কার্যত সবুজায়নকে ব্রাত্য রেখে। নিউটাউনের মতো স্মার্ট সিটিতেও সবুজায়নের নামে যে গাছ লাগানো হয়েছে তা নিছকই বাহারি গাছ, তাকে বৃক্ষরোপণ বলা যায় না। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বনায়নের পরিভাষায় যার ৮০ শতাংশই ‘টল ট্রি’ বা বড় গাছ নয়। দূষণ রোধে বাতাসে ধূলিকণা বা ডাস্ট পার্টিকল ধরে রাখার ক্ষমতা যে সব গাছের প্রায় নেই।

এবিষয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন-অধিকর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন , ‘‘সারা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে তাতে আপাত একটা চাকচিক্য থাকলেও আড়ালে পরিবেশের ভারসাম্যটাই নষ্ট হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, সবুজ উচ্ছেদ করে বা জলাজমি বুজিয়ে যে উন্নয়ন তার প্রাথমিক শর্ত বৃক্ষরোপণ বা জলাশয় রক্ষা কোনওটাই কার্যকর করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে শহুরে বনায়ন বা আরবান ফরেস্ট্রি সংক্রান্ত কোনও স্পষ্ট নীতি আজও নেই।’’

সবমিলিয়ে এককথায়, দিন দিন হতে থাকা উন্নয়নের ‘ধুলোয়’ ক্রমেই চাপা পড়ছে সবুজায়ন! সাফ হচ্ছে সবুজ, চারিদিক ছেয়ে যাচ্ছে ধূসর ধুলোয়। যে বিষয় রীতিমতো ভাবাচ্ছে, পরিবেশকর্মী, বিশেষজ্ঞ সহ রাজ্যের সাধারণ মানুষকেও।


Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর