বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: গতকাল রাতে গত হয়েছেন ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কিংবদন্তি, সর্বকালের সেরা তারকা পেলে। মৃত্যুকালে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির বয়স হয়েছিল ৮২। কিছুদিন আগেই নিজের ভবিতব্য বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট। নিজের প্রিয়জনদের সজ্ঞানেই বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার যখন তিনি ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোক যাত্রা করলেন তখন বিশ্বের প্রতিটি কোনার, প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত মানুষ তাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কথাটা হয়তো বলেছেন তার ব্রাজিলিয়ান উত্তরসূরী নেইমার জুনিয়র। কিছুদিন আগেই কাতার বিশ্বকাপে পেলের ব্রাজিলের হয়ে করা গোলসংখ্যা ছুঁয়েছেন তিনি। কিংবদন্তির প্রেমে নেইমার নিজের বার্তায় বলেছেন, “পেলের আগে ‘১০’ টা কেবলমাত্র একটি সংখ্যা ছিল। তিনি আসার আগে ফুটবলটা শুধুমাত্র আর পাঁচটা সাধারণ খেলার মতোই একটি খেলা ছিল। তিনি ফুটবলকে শিল্পের পর্যায়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রথমবার। তিনি বিশ্বের দরিদ্র ও কালো মানুষদের মুখের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। বিশ্বের দরবারে ব্রাজিলকে পরিচিতি দিয়েছিলেন। ব্রাজিল আজ বিশ্ব ফুটবলে যে জায়গায় আছে সেই জায়গায় পৌঁছানোর পেছনে তার অবদান অসীম। তিনি হয়তো চলে গেছেন কিন্তু তার জাদু অক্ষয় থাকবে। পেলে অবিনশ্বর।”
১৯৫৬ সালে ব্রাজিলের স্যান্টোস ক্লাবের হয়ে কেরিয়ার শুরু করা পেলে ১৯৫৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে গোটা দুনিয়ার নজরে আসেন। সেবার সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন পেলে। তারপর ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালেও দেশকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছেন। ইউরোপের অনেক নামিদামি ক্লাবের অফার থাকলেও ব্রাজিল সরকার তাকে ন্যাশনাল ট্রেজার ঘোষণা করে এবং ১৮ বছর তিনি ব্রাজিলের ক্লাব স্যান্টোসেই খেলে তাদের দুটি কোপা লিবার্তেডোরেস জিতিয়েছেন। খেলোয়াড় জীবনের শেষ দুই বছর কাটিয়েছিলেন নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবে যাদের হয়ে তিনি মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ভারতেও খেলে গিয়েছেন। ১৯৭৭ সালে ইডেন গার্ডেন্সে সবুজ মেরুণ শিবিরের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলেন ফুটবল সম্রাট। তার মৃত্যুতে এটিকে মোহনবাগানের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করেছে ইস্টবেঙ্গলও।
তার মৃত্যুর খবর পাওয়ামাত্র শোকপ্রকাশ করেছেন এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছেন, “সমস্ত ব্রাজিলের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা, এবং বিশেষ করে জনাব এডসন আরন্তেস ডো ন্যাসিমেন্টোর পরিবারের প্রতি। চিরন্তন কিংবদন্তি পেলের এই বিদায়ে যে পুরো ফুটবল বিশ্বর কাছে কষ্টকর, তা সবাই জানেন। বহু মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা, আগামীর কাছে তিনি আজ, চিরতরে একজন উদাহরণ। তিনি সবসময় আমার জন্য যে স্নেহ দেখিয়েছিলেন তা দূর থেকেও আমি অনুভব করতাম। তিনি কখনই বিস্মৃত হবেন না এবং তার স্মৃতি চিরকাল বেঁচে থাকবে আমাদের প্রতিটি ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। শান্তিতে থাকুন, কিং পেলে।” সদ্য বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি লিওনেল মেসিও পেলের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।