বাংলাহান্ট ডেস্ক: বার বার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন দেশে না ফেরার। এদিকে ভারত সরকারও বার বার বলেছিল, তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণ করার জন্য যা যা পদক্ষেপ করা দরকার তাই করা হচ্ছে। অবশেষে পঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্কের ১১ হাজার কোটির দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীকে (Nirav Modi) ভারতে ফেরানোর ব্যাপারে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত।
ভারত থেকে টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় বিরোধীরাও বার বার নিশানা করছিল মোদী সরকারকে। ব্রিটেনের আদালত নীরবের বিপক্ষে রায় দেওয়ায় তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে আনার পথ অনেকটাই মসৃণ হল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই মুহূর্তে তাঁর ঠিকানা লন্ডনের ওয়্যান্ডসওয়ার্থ জেল। তবে খুব তাড়াতাড়িই তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে।
নীরবের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে লন্ডন হাইকোর্ট। নীরবের আবেদন শুনে আদালত সাফ জানিয়েছে, নীরবের মানসিক অবস্থা খারাপ ও সে আত্মহত্যা করতে পারে এটা তাঁরা মানছেন না। এছাড়াও চলতি বছরের শুরুতে আদালত জানিয়েছিল, গত বছর ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত নীরবের প্রত্যর্পণের পক্ষে যে রায় দিয়েছিল তা যথেষ্ট সঙ্গত।
তবে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে নীরব মোদী লন্ডন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে সব শর্ত তিনি পূরণ করতে পারেন কি না সেদিকেই রয়েছে সবার নজর। যদিও লন্ডনের আদালতের এই রায়ের পর নীরব মোদীকে ভারতে ফিরিয়ে আনা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে মত অনেকের।
এদিন আদালতে নীরবের আবেদন খারিজ করে দেয়বিচারপতি জেরেমি স্টুয়ার্ড স্মিথ এবং বিচারপতি রবার্ট জে-র ডিভিশন বেঞ্চ। তবে আদালত নীরবের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নীরব মোদীর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লন্ডন হাইকোর্ট দুই মনোবিদকে নিয়োগ করেছিল। কারডিফ বিশ্ববদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ফরেনসিক সাইকিয়াট্রিস সম্প্রতি লন্ডন জেলে নীরব মোদীকে দেখতে গিয়েছিলেন।
তাঁরা আদালতে জানিয়েছিলেন, নীরব চূড়ান্ত হতাশাগ্রস্ত এবং তাঁর আত্মহত্যা করার প্রবণতা রয়েছে। তবে এদিন আদালত আত্মহত্যা করার প্রবণতার বিষয়টি খারিজ করে দেয়। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নীরবকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা যেতেই পারে। তবে শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া কবে সম্পন্ন করা হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
ভারতে এখনও পর্যন্ত নীরবের দু’হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। দু’মাস আগে হংকংয়ে তাঁর প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রসঙ্গত, নীরব মোদীকে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ লন্ডনের একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তারপর থেকেই তাঁকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার।
গত ১৫ এপ্রিল ব্রিটেনের মুখ্যসচিব প্রীতি প্যাটেল নীরবকে ভারতে প্রত্যর্পণের চুক্তিতে সই করেন। কিন্তু নীরব আবেদন করেন, ভারতে ফিরলে তাঁর সঠিক বিচার হবে না। সেই আবেদনের শুনানিই চলছিল লন্ডন হাইকোর্টে। তবে তাঁর এই আবেদনকে গ্রাহ্য করা হল না। তাই অবশেষে এই গুজরাটি হিরে ব্যবসায়ীকে ফিরিয়ে আনা হবে ভারতে। তারপর তাঁকে প্রস্তুত করা হবে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সামনে।