বাংলা হান্ট ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি (Nitin Gadkari) ক্রমবর্ধমান পেট্রোল-ডিজেলের দামবৃদ্ধির আবহেই এগুলির ব্যবহার কমানোর জন্য প্রায়শই দেশবাসীদের কাছে আবেদন জানান। বরং, তার পরিবর্তে দূষণ কমাতে এবং পরিবহণের খরচ সামলাতে তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারের বিষয়টিও বারংবার তুলে ধরেন। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন যে, ডিজেল চালিত বাসের তুলনায় বৈদ্যুতিক বাসের টিকিটের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কম হতে পারে। পাশাপাশি, তিনি হাইড্রোজেন গাড়ির ব্যবহারের বিষয়টিও জানিয়েছেন।
মূলত, গত সোমবার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নীতিন গড়করি সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের উপস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিদের কাছে এক অনন্য দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের সব দাবি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমারও একটি দাবি আছে, তা আপনাদের পূরণ করতে হবে। আর সেই দাবি হল দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরকে শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ ও জল দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা। সবাইকে পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইন্দোরকে দেশের মডেল শহর হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত।”
গড়কড়ির পরামর্শ: এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, “শহরে প্রবাহিত নর্দমা থেকে জল নিষ্কাশন করে বিশুদ্ধ করুন। তারপর একটি ইলেক্ট্রোলাইজার রাখুন। সেখান থেকে হাইড্রোজেন বের করে ইথানলে চলমান জেনারেটর বসিয়ে সবুজ হাইড্রোজেন তৈরি করুন। আর ওখান থেকেই বাস এবং ট্রাক চালান। এতে শুধু পরিবেশ নয়, অর্থও বাঁচবে। এক লিটার সবুজ হাইড্রোজেন আসবে ১ ডলারের মূল্যে। যার সাহায্যে ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এতে ধোঁয়া বা শব্দ হবে না।”
এভাবে পকেট ও পরিবেশ দু’টোই বাঁচান: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি বলেছেন, “আমি ডিজেল কিংবা পেট্রোল গাড়িতে বসি না। বরং আমি বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করি। দিল্লিতে আমি হাইড্রোজেন গাড়িতে চলাচল করি। যা মার্সিডিজের চেয়েও ভালো। কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ হাজার ইলেকট্রিক বাস আনছে। কারণ, একটি ডিজেল বাস চালাতে প্রতি কিলোমিটারে ১১৫ টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে, একটি বৈদ্যুতিক বিলাসবহুল এসি বাস চালাতে প্রতি লিটারে ৪১ টাকা এবং নন-এসি বৈদ্যুতিক বাসে এক কিলোমিটারের জন্য মাত্র ৩৮ টাকা খরচ হয়।”
শিবরাজের কাছে আবেদন: এছাড়াও তিনি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন যে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মধ্যপ্রদেশের রাজ্য পরিবহণের বাসগুলিকে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক বাসে রূপান্তর করার ঘোষণা করা উচিত। আমি আপনাকে সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছি যে কিভাবে পুরো মধ্যপ্রদেশের বাসগুলি কোনো খরচ ছাড়াই চলতে পারে। আজ ডিজেল বাসের যা ভাড়া তা কমিয়ে, ৩০ শতাংশ কম দামেই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক বাসে জনসাধারণ চলাচল করতে পারবেন। তাই পেট্রোল ও ডিজেল ব্যবহার বন্ধ করুন। এটা আমাদের এবং আপনার দায়িত্ব।”
পরিবহণ খাতে দ্রুত পরিবর্তন: নিতিন গড়করি আরও বলেছেন, “আমি বলছি আগামী ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মধ্যপ্রদেশকে গ্রিন হাইড্রোজেন, ইথানল, বায়ো-সিএনজি, বায়ো-এলএনজিতে এক নম্বর হতে হবে। এই দিকটিতে সবাইকেই ভাবতে হবে। বিশ্ব যখন দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তখন পরিবহণ খাতেও দ্রুত পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা যাতে জ্বালানি আমদানিকারক না হয়ে রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠতে পারি সেই চেষ্টা করা দরকার। নতুন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করুন।”
২০ টি উড়ালপুল প্রকল্পের অনুমোদন: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, “২০১৪-র পরে, শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশেই আড়াই লক্ষ কোটি টাকার কাজ অনুমোদিত, নির্মিত এবং সম্পন্ন হতে চলেছে। পাশাপাশি, ২০২৪ সালের মধ্যে ৪ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে এই পরিসংখ্যান।” জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ২০ টি উড়ালপুলসহ বেশ কিছু সড়ক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ২,৩০০ কোটি টাকার ৬ টি সড়ক প্রকল্পও রয়েছে।