বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আবারো কি একবার বদলাতে চলেছে বিহারের (Bihar) রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট? বর্তমানে নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) এবং বিজেপির (BJP) ভিতর পারস্পরিক দ্বন্দ্বে ক্রমশ নয়া মোড় নিতে চলেছে বিহারের রাজনীতি।
জল্পনার সূচনা হয় গতকাল সন্ধ্যায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের একটি ঘোষণায়। গতকাল নীতীশের দল জেডিইউ জানায় যে, কেন্দ্র সরকারের মন্ত্রিসভায় তারা কোন দলীয় প্রতিনিধি পাঠাবে না আর এরপরেই সূত্র খবর মিলতে শুরু করে যে, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে ফোন করেছেন নীতীশ। এমনকি, আগামী কয়েকদিনের তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ সামনে উঠে আসছে আর এরপর থেকেই রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনা ক্রমশ উজ্জ্বল হতে শুরু করে। সূত্রের খবর, আগামীকাল নীতীশ কুমার তাঁর দলের সকল বিধায়ককে নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করেছেন। ঠিক একই ভাবে বিহারের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি এবং কংগ্রেসও তাদের সকল বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি পুনরায় একবার বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেসের ‘হাত’ ধরতে চলেছে নীতীশ?
প্রসঙ্গত, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং বিজেপির মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক বহুদিন ধরেই টালবাহানার মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ সালে বিধানসভা ভোটে জয়লাভের পর থেকেই সমস্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে বিজেপির তুলনায় আসন সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও নীতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করা অনেকেরই পছন্দ হয়নি। একইসঙ্গে বর্তমানে জেডিইউ-এর প্রাক্তন জাতীয় সভাপতি আরসিপি সিংকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা নিয়েও ‘অসন্তুষ্ট’ হন নীতীশ। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার দলত্যাগ করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলে কটাক্ষ ছুড়ে দেন আরসিপি আর এ সকল ঘটনাতেই ক্ষুব্ধ জেডিইউ প্রধান বিজেপির জোট ছাড়তে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ জল্পনা মাঝে এ দিন জেডিইউ জাতীয় সভাপতি রাজীব সিং বলেন, “২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর আমরা দলগতভাবে একটি সিদ্ধান্তে আসি যে, কখনোই আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেব না আর সেই অনুযায়ী আমাদের এই সিদ্ধান্ত।” অপরদিকে, বিহারের শিক্ষামন্ত্রী এ প্রসঙ্গে জানান, “আমাদের দলকে যে সম্মান দেওয়ার কথা বিজেপির, তা আমরা পাচ্ছি না। তাই আমাদের দলের তরফ থেকে কেউ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না।” তবে দলের তরফ থেকে সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত বিজেপি জোট ছাড়ার কোন ইঙ্গিত না মিললেও পরবর্তীতে সোনিয়া গান্ধীকে নীতীশের ফোন এবং সকল দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক ক্রমশ জল্পনা উস্কে দিয়েছে।
তবে বর্তমানে প্রধান যে প্রশ্নটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা হলো, যদি নীতীশের দল বিজেপির জোট ছেড়ে কংগ্রেস এবং লালু প্রসাদের আরজেডির হাতে ধরতে চায়, তবে তারা কি রাজি হবে? প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে একইভাবে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে আরজেডির হাত ধরেন নীতীশ কুমার। সেই সময় একইসঙ্গে জোট সরকার স্থাপন করে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসান একদা তাঁর ‘বিশেষ’ বন্ধু লালুপ্রসাদ যাদব। তবে এরপর পুনরায় একবার তাদের হাত ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে জোট করেন জেডিইউ প্রধান। তাই পুনরায় একবার কংগ্রেস এবং আরজেডি সেই একই পথে পা বাড়াবে কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন।
তবে এই সম্ভাবনা মাঝে বিজেপির চাপ যে ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তা বলা বাহুল্য। একদিকে যখন সামনে লোকসভা নির্বাচন, সেই সময় বিহারের মতো রাজ্যে সরকার ভাঙলে তা বিজেপির জন্য যথেষ্ট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে মোদী এবং অমিত শাহের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে চলেছে, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।