বাংলাহান্ট ডেস্ক : আসন্ন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024)। দেশ জুড়ে প্রস্তুতি শুরু সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই। গেরুয়া ঝড় রুখতে ভারতে মহাজোটের কোনও প্রয়োজন নেই। আজ এমন দাবি করল তৃণমূল (TMC) শীর্ষ নেতৃত্ব।
তৃণমূলের বক্তব্য, বিহারে নিতিশ কুমার বিজেপি-র সঙ্গত্যাগের পর তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে মাত্র তিনটি রাজ্যেই মহাজোট গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেগুলি হল বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্র। এ ছাড়া অসমেও সেই সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া দেশের অন্যত্র বিজেপি-র মোকাবিলায় মহাজোটের প্রয়োজনই নেই। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্কার জানান, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের সব ক’টিতেই লড়বে তাঁর দল। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে দলনেত্রীর বার্তা খুবই স্পষ্ট। বেশিরভাগ রাজ্যে প্রধান শক্তিশালী দলই যাতে বিজেপি-র মুখোমুখি হয়, তা নিয়ে বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করছে তৃণমূল। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী কোনও কৌশল নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ জানান, ‘বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্র বাদে বাকি কোনও রাজ্যে তথাকথিত মহাজোটের কোনও প্রযোজন হচ্ছে না। ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন যে যেখানে পারবে বিজেপি-কে হারানোর জন্য লড়াই করবে, পরে সকলে একসঙ্গে চলে আসবে।’ এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, পঞ্জাব ও দিল্লিতে আপ, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, তেলঙ্গানায় টিআরএস, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, উত্তরপ্রদেশে এসপি-র মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলি লড়বে কেন্দ্রীয় শক্তি বিজেপি-র বিরুদ্ধে।
২০২৪ নির্বাচনে মোদি বনাম রাহুল গান্ধী মডেল অনুসরণ করা হবে না। তা ইতিমধ্যেই ব্যর্থ। তার বদলে মোদিকে লড়তে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের শক্তিশালী নেতাদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের মতে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান বা গুজরাতের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের লড়াইয়ে কোনও ‘ভোট-কাটুয়া’ যাতে না থাকে তা নিশ্চিত করা খুব দরকার।
এই তত্ত্বের কয়েকটি কারণ রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। আগে মহাজোট হলে নেতৃত্বের প্রশ্ন নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাপটে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্য রাজনীতিতে বেহাল দশা। আর এই কারণেই মমতা এখনই নিজেকে বিরোধী জোটের নেত্রী হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন না। বরং তাঁর বার্তা, সকলে নিজ নিজ রাজ্যে লড়াই করুন। তিনি তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করবেন নির্বাচনের পর। যদিও কংগ্রেস মনে করছে আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে নিজের রাজ্যেই লড়াই করাটা অনেক সহজ। কিন্তু কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল, দেশের সর্বত্র যেখানে সংগঠন, কর্মী ও প্রার্থী রয়েছে, সেখানে তারা নিজেরা লড়াই থেকে সরে আসবে কিভাবে?
বিজেপি ২০২৪-এর নির্বাচনে আড়াইশো আসনের কাছাকাছি আটকে যায়, তা হলে বিজেডি এবং জগন রেড্ডির দলের গুরুত্ব উভয় পক্ষের কাছেই বৃদ্ধি পাবে। তারা এতদিন বিজেপি-র ‘বি’ দল হিসাবেই থেকে গিয়েছে। কিন্তু বিজেপি দুর্বল হয়ে গেলে এই দুই দলই বিরোধী শিবিরে আসতে পারে। এমনই মনে করছে তৃণমূল। বিরোধী পক্ষ মনে করছে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলিতে এনডিএ গত বারের তুলনায় অনেক কম আসন পাবে।
এরমধ্যেই বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব নিতিশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবি জানিয়েছে। তিনি বলেন ‘সমস্ত বিরোধী দলের হয়ে কথা বলতে পারি না। তবে এটুকু বলতে পারি, নিতিশ কুমার খুবই শক্তিশালী প্রার্থী। তাঁর ৩৭ বছরের দীর্ঘ সংসদীয় এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও রয়েছে। বিরোধী নেতাদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভাল।’ তেজস্বী মনে করেন, ‘বিহারে জেডি(ইউ), আরজেডি এবং কংগ্রেসের একসঙ্গে ক্ষমতায় আসার একটাই বার্তা। বিরোধী দল নির্বিশেষে স্বীকার করছে, দেশের সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ বিজেপি-র একাধিপত্য।’ তাই সেই একাধিপত্যকে চূর্ণ করার জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেছে বিরোধী শক্তিগুলি।