সালটা ১৯১৩, শহর কলকাতা জুড়ে খুশির হিল্লোল। এশিয়ার প্রথম মানুষ হিসাবে নোবেল জয় করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারপর একে একে আরো ৩ বাঙালি জিতেছেন নোবেল। কয়েকবার মনোনয়ন সত্ত্বেও একটুর জন্য নোবেল হাতছাড়া হয়েছে মেঘনাদ সাহা, মহাশ্বেতা দেবী, তসলিমা নাসরিনদের। কিন্তু এই তালিকায় রয়েছেন আরো একজন বাঙালি। নোবেল জয়ের যোগ্য দাবিদার হওয়ার সত্ত্বেও শুধু ‘নেটিভ’ হওয়ার কারনেই বঞ্চিত তিনি। বঞ্চনার শিকার না হলে রবীন্দ্রনাথেরও ১০ বছর আগে নোবেল জয় করতে পারতেন কিশোরী মোহন।
কে এই কিশোরীমোহন? কলকাতায় তখন ম্যালেরিয়ার গবেষণা চালাচ্ছেন রোনাল্ড রস সাহেব। সেখানেই সাহেবের গবেষণায় প্রয়োজন হল এক সহযোগীর। অনেক ইন্টারভিউ নেওয়ার পর প্রেসিডেন্সি কলেজের এক যুবককে দেখে মুগ্ধ হলেন রস সাহেব। অসম্ভব মেধাবী, ইংরেজিতে দক্ষ পাশাপাশি হাতে কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা৷ অসাধারণ এই কিশোরী মোহনই হলেন রস সাহেবের সহযোগী।
কিশোরী মোহনের দাদু ছিলেন নাম করা কবিরাজ। সেই সুবাদে আয়ুর্বেদের অনেক কিছুই জানা ছিল কিশোরীর। ম্যালেরিয়ার কারন আবিস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। তবুও ১৯০২ সালে যখন রস সাহেব নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেলেন তার সাথে নাম থাকল না এই বাঙালি যুবকের। এক মঞ্চে ব্রিটিশ প্রভুর সাথে নোবেল নেবেন এক বাঙালি নেটিভ, একথা মানতে পারেন নি ব্রিটিশরা।
তবে পরবর্তীকালে বাঙালি সমাজের প্রতিবাদের সামনে পরে ব্রিটিশ সরকার তাকে তিন ভরি ওজনের একটি স্বর্ণপদক দেয়। তবে সেই স্বর্ণপদকের ওজন যতই হোক না কেন তা নোবেল নয়। বর্ণভেদের স্বীকার না হলে প্রথম ভারতীয় হিসাবে নোবেল প্রাপকের তালিকায় নাম উঠত কিশোরী মোহনেরই।