নার্সের কাজ ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে করোনার বেওয়ারিশ মৃতদেহ সৎকার করছেন মধুস্মিতা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কোভিড আমাদের দেখিয়েছে একের পর এক মর্মান্তিক দৃশ্য। একদিকে যেমন, রোজই সংক্রমিত হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তেমনই প্রতিদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন কয়েক হাজার সহনাগরিক। গত ২৪ ঘন্টাতেও গোটা দেশ জুড়ে মৃত্যু হয়েছে ৪১৯৪ জন মানুষের। মৃত্যুহার প্রায় ১.১২%। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা সংক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ ২২ হাজার ৩১৫ জন মানুষ। আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গেই নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ১৫৬ জনের। চারিদিকে এই মৃত্যু মিছিল আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য তুলে ধরেছে। গঙ্গা-যমুনা পরিণত হয়েছে শবাগারে। কাঠের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া, কোভিডের আতঙ্ক, শবদাহের লোকের অভাব সবমিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশ্রি পরিস্থিতি। ফলতো কেউবা শব ভাসিয়ে দিচ্ছেন জলে, কেউবা নদীর ধারে কোনভাবে কবর দিয়েই সম্পন্ন করছেন শেষকৃত্য।

এমতাবস্থায়, মানবিকতার অনন্য নজির গড়লেন ওড়িশার ভুবনেশ্বরে বসবাসকারী এক দম্পতি। একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত বেওয়ারিশ মৃতদেহগুলিকে অন্তিম সৎকার করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তারা। মধুস্মিতা এবং তার স্বামী মিলে এখনো অবধি প্রায় রও বেশি করোনা আক্রান্ত বেওয়ারিশ মৃতদেহ সৎকার করেছেন। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন মধুস্মিতা। প্রায় নয় বছর এই কাজ করার পর গতবছর লকডাউনে তার স্বামী যখন চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তরফে মৃতদেহ সৎকারের কাজ শুরু করেন, মানবিকতার ডাকেই আর থেমে থাকতে পারেননি তিনি। ফলত নার্সের কাজ ছেড়ে দিয়ে ভুবনেশ্বরে ফিরে স্বামীর সঙ্গে যোগ দেন তিনিও। মধুস্মিতা জানান, “গত নবছর ধরে আমি নার্সের কাজ করে মানুষের সেবায় যুক্ত থেকেছি। কিন্তু ২০১৯ সালে আমার স্বামী যখন বেওয়ারিশ লাশ সৎকারের কাজ শুরু করেন। আমিও তার সাথে এসে যুক্ত হই।”

একজন মহিলা হওয়ায় নানারকম সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে মধুস্মিতাকে। কিন্তু তাতে তার আস্থা একটুও কমেনি। তিনি মনে করেন মানুষের আসল ধর্ম হলো মানবিকতা। আর সেই কারণেই আজও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই কাজ করে চলেছেন তিনি। এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “আমি ভুবনেশ্বরে আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে পাঁচশো মৃতদেহ এবং গত বছর তিনশোটিরও বেশি কোভিড সংক্রামিত মৃতদেহ দাহ করেছি। একজন মহিলা হিসাবে এই কাজআমি করার জন্য সমালোচিত হয়েছিলাম। তবে আমি আমার স্বামীর সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।” মহামারীর অন্ধকার যখন চারদিক ক্রমশ গ্রাস করছে আলোর পথ দেখান এই মধুস্মিতারাই। ইতিমধ্যেই তার এই কাজের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি।


Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর