লকডাউনে অভাবের সংসার বাঁচাতে ভিক্ষা নয়, শিরদাঁড়া সোজা রেখে কাজ চান বৃদ্ধ বেহালাবাদক

Published On:

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ লকডাউন যেন কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভগবান মালির জীবনে। বাবা কস্তুর মালির থেকে বেহালা বাজানো শিখে স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়ের সংসার টেনে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে বৃদ্ধ বয়সের ছোট নাতনির মুখে খাবার তুলে দিতে আবারও হাতে তুলে নিলেন বেহালা, বসে পড়লেন কলকাতার ফুটপাথে।

মালদার এক গ্রামে স্ত্রীকে নিয়ে বর্তমানে থাকেন বেহালাবাদক ভগবান মালি। সেখানেই নানা অনুষ্ঠানে বেহালা বাজিয়ে তাঁদের সংসার চলে যায়। কিন্তু করোনা আবহে অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ বললেই চলে। কোনক্রমে তাঁদের জীবন কাটছিল। এরই মধ্যে খবর পেলেন, তাঁদের মেয়ে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছে।

নাতনির জন্মের খবর শুনে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে গতমাসেই কলকাতায় ছুটে আসেন সস্ত্রীক ভগবান মালি। কিন্তু সেখানে এসে আরও করুন দশা হয় তাঁদের। লকডাউনে কারখানার কাজ হারিয়ে বর্তমানে বেরোজগার হয়ে পড়েছেন জামাই। আনন্দের দিনে, দুঃখ যেন সবদিক থেকে গ্রাস করল তাঁদের পরিবারকে।

মেয়ে নিজের সংসার চালাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে, তাঁর উপর আরও দুটো অতিরিক্ত পেটের ভার। অগত্যা সকাল হতেই বেহালা হাতে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন ভগবান মালি। গিরিশপার্কে বিবেকানন্দ রোডে ফ্লাই ওভারের নীচে হরিয়ানা ভবনের সামনেই এখন অস্থায়ী ঠিকানা ভগবান বাবুর।

ছোট নাতনিকে তো আর না খাইয়ে রাখা যায় না, তাই রাতটুকু মেয়ের বাড়িতে কাটান, আর সকাল হতেই হাতে বেহালা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রোজগারের উদ্দেশ্যে। দিনের শেষে ২০০ কখনও ৩০০ টাকা, মানুষ ভালোবেসে যা দেন, তাই দিয়েই সংসারের জন্য চাল ডাল কিনে নিয়ে যান তিনি।

তবে বয়সের ভার কিছুটা কাবু করে ফেলেছে ভগবান মালিকে। চোখ দুটোও আর আগের মতন পরিষ্কার নেই, কানেও ঠিকমত শুনতে পান না। কিন্তু মাথা ভর্তি সাদা চুল এবং গাল ভর্তি সাদা দাড়ি নিয়েও, এই বয়সে কাজের ইচ্ছা তাঁর শেষ হয়ে যায়নি। তিনি জানিয়েছেন, এই বৃষ্টির দিনে আর কটা টাকাই বা আয় হয়? সেভাবে তো শ্রোতাও আসেন না বৃষ্টির মধ্যে। তাই কিছু কাজ পেলে ভালো হত। শিরদাঁড়া সোজা করে আছেন এখনও। যেকোন অনুষ্ঠানেও বাজাতে রাজী ভগবানবাবু।

https://www.facebook.com/watch/?v=1399252983777103&t=3

ভগবান মালির প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের কমিউনিটি পুলিশিং উইংয়ের এক ইন্সপেক্টর, শিল্পীর পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অন্যদের তাঁদের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। সঙ্গে ফোন নম্বরও দিয়েছেন- 7501029798। সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘উনি যাতে শিল্পীর যোগ্য মর্যাদা পান, সেই কামনাই করব’। আশা করা যাচ্ছে এতে করে কিছুটা সুরাহা হতে পারে শিল্পী ভগবান মালির পরিবারের।

X