বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ‘যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ’- বেদান্ত অনুসারে বাবা মহাদেব (Mahadev) হলেন মহা ঈশ্বর। বাবা মহেশ্বর কখনও বিষ্ণুরূপে জগত সংসারকে পালন করেছেন, আবার কখনও রুদ্ররূপে করেছেন সংহার কখনও বা তিনি হয়েছেন শ্মশানবাসী ভোলেবাবা রূপে।
আজ শ্রাবণ মাসের অন্তিত সোমবারে আমরা ভারতে অবস্থিত মহাদেবের এক বিশেষ মন্দির অর্থাৎ তারকেশ্বর মন্দিরের কিছু রহস্যময় ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব।
তারকেশ্বর (Tarkeshwar) মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় তারকেশ্বর গ্রামে অর্থাৎ কলকাতা থেকে প্রায় ৫৮ কিমি দূরে অবস্থিত। ১৭২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই আটচালা মন্দিরটি। ধারণা করা হয়, দেবাদিদেবের মাধ্যমে গাঙ্গেয় দ্বীপের পাশে জঙ্গলে উপস্থিত এক শিবলিঙ্গের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন রাজা ভরমল্ল। স্বপ্নাদেশ পাওয়া মাত্রই রাজা ভরমল্ল বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে, মহাদেবের আদেশ অনুযায়ী সেই শিবলিঙ্গ জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন।
পাশাপাশি তারকেশ্বর গ্রামে গৃহীনিরা যেখানে বহুদিন ধরে ধান ভানতেন, সেখানে একটি শিবলিঙ্গের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়। ধারণা করা হয়, নিজেদের অজান্তেই গৃহিণীরা সেই শিবলিঙ্গের উপরেই ঢেঁকিতে ধান ভানতেন। তবে মহাদেব একরাতে তাঁদের মধ্যেকার একজন গৃহিণীকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানান যে, তারা যে স্থানে ধান ভানেন, সেখানেই বিরাজ করছেন স্বয়ং মহাদেব।
তখনই সেই গৃহিণী স্বপ্নাদেশের সত্যতা যাচাই করতে সেই স্থানে গিয়ে শিবলিঙ্গটিকে দেখতে পান। তিনি তখন ওই শিবলিঙ্গটিকে অন্যত্র স্থাপন করতে চাইলে, তা সম্ভবপর হয় না। তখন ওই স্থানেই শিবলিঙ্গটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেইসঙ্গে শিবলিঙ্গের মাথায় গর্ত দেখে ধারণা করা হয়, দীর্ঘদিন ধান ভানার ফলে সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত হলেও, এই ঘটনাগুলির সত্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।
তারকেশ্বর মন্দিরের সৃষ্টির ইতিহাস রহস্যময় হলেও, মন্দিরটি কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। ফাল্গুন মাসে শিবরাত্রি, চৈত্র মাসে গাজন এবং শ্রাবণ মাসে উৎসব ছাড়াও অন্যান্য সময় এই মন্দিরটিতে লোক সমাগম দেখা যায়। এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হল, মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত দুধপুকুর। বাবা ভোলানাথের ভক্তদের মতে এই পুকুরে স্নান যাত্রা করলে, মনস্কামনা পূরণ হবে এবং সর্বপরি মানুষের পাপ স্খলন হবে।
তারকেশ্বর মন্দিরটির পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি নোট মন্দির, লক্ষ্মী নারায়ণ এবং কালী মন্দির অবস্থিত রয়েছে। পাশাপাশি তারকেশ্বর থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরে দেউল পাড়া নামক একটি স্থানে একটি বৌদ্ধমন্দিরও রয়েছে। দর্শনার্থীরা তারকেশ্বর ভ্রমণের পাশাপাশি এই অঞ্চলগুলিতেও ভ্রমণের উদ্দ্যেশ্যে ভিড় জমান।