বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: যে পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ হয়তো সমস্ত হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবে, সেই পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন তারা। প্রায় দুটি দেহ, একটি প্রাণ, এমনি অবস্থা থেকে নিজেদের পায়ে দাঁড়ালেন সোহনা-মোহনা। সোহনা পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড বা পাওয়ারকম এর দফতরে চাকরি পেয়েছে। সোমবার ডেন্টাল কলেজের পাশের পাওয়ার হাউসে নিয়মিত চা মাদুর হিসেবে শেষবার দায়িত্ব পালন করবেন সোহনা। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর তাকে নিয়োগপত্র দেয় পাওয়ারকম।
এই দুজন প্রকৃতির এক অদ্ভুত অভিশাপের শিকার। উভয়েরই বুকের নিচ থেকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত। তাদের মাথা, বুক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং মেরুদণ্ড আলাদা, তবে কিডনি, লিভার এবং মূত্রাশয় সহ শরীরের অন্যান্য অংশ একজন ব্যক্তির। ছোটবেলা থেকে দুজনেই একে অপরকে সব কাজে সাহায্যে করে। দুই ভাইয়ের আলাদা আলাদা আধার কার্ড আছে। চিকিৎসকদের মতে, দুই লাখের মধ্যে একটি ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে, যখন শরীরে লেগে থাকা শিশুর জন্ম হয়। সোহনা ও মোহনাও এই ব্যতিক্রমী উদাহরণ।
পাওয়ারকম জানিয়েছে, সোহনাকে তার মাইনে হিসাবে মাসিক বিশ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। আসলে চলতি বছরের জুলাইয়ে ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমা করেছেন সোহানা-মোহনা। এরপর পাওয়ারকমে আবেদন করেন। কাকে কাজ দেবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল পাওয়ারকম। কারণ, দুজনেই ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমা করেছেন এবং ইলেক্ট্রিসিটি ডিপার্টমেন্ট সংক্রান্ত কাজেও দক্ষ।
শেষ পর্যন্ত পাওয়ারকম ব্যবস্থাপনা সোহনাকে নিয়োগ দিতে রাজি হয়। সোহনা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং তাঁকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিলে। এর পর মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নির সঙ্গে কথা বলেন পাওয়ারকমের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর বেণু প্রসাদ। পাঁচ মাস পরে, তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। পাওয়ারকম জানায়, বিশেষ মামলার ভিত্তিতে সোহনাকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। দুই বছর কাজ করার পর প্রমোশন পাবেন সোহনা।
সোহনা-মোহনার জন্ম ২০০৩ সালের জুন মাসের ১৪ তারিখে। দিল্লির সুচেতা কৃপলানি হাসপাতালে জন্মেছিলেন দুজনে। মা কামিনী ও বাবা সুরজিৎ কুমার তাদের আপন করে নিতে চাননি। অমৃতসরের পিঙ্গলওয়ারা প্রতিষ্ঠান তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। দুজনেই বেশিদিন বেঁচে থাকবেন না বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রকৃতির সব নিয়মের ব্যাখ্যা কি বিজ্ঞান দিতে পারে? জীবনের সব প্রতিকূলতাকে হারিয়ে এ বছরই প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন সোহনা ও মোহনা।
এরই মধ্যে সোহনা-মোহনা শনিবার জেলা প্রশাসক গুরপ্রীত সিং খাইরার সাথে দেখা করে তাদের অফিসে যাতায়াতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পাওয়ারকমের সিএমডি বেণু প্রসাদের সঙ্গে কথা বলেন। সোহনা-মোহনাকে বাড়ি থেকে অফিসে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।