বাংলা হান্ট ডেস্ক: “ক্যানসার” শব্দটি উচ্চারিত হলেই কার্যত তৈরি হয় আতঙ্কের আবহ। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ক্যানসারের সাথে অসম লড়াই করে পতিত হন মৃত্যুমুখে। এমতাবস্থায়, দীর্ঘদিন ধরেই এই মারণ রোগের নিরাময়ের উৎস খুঁজে পেতে চলছিল গবেষণা। তবে, এবার বিরাট আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়, এবার একটিমাত্র ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরেই ক্যানসার নির্মূল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা সত্যিই ঐতিহাসিক!
মূলত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক মেমোরিয়াল সোলন কেটেরিং ক্যান্সার সেন্টারে এই অলৌকিক ঘটনাটি ঘটেছে। যা দেখে বিষ্মিত চিকিৎসকমহলও। এই প্রসঙ্গে ওই সেন্টারের ড: লুই এ. ডায়াজ জে জানিয়েছেন, এই ঘটনা “ইতিহাসে প্রথমবারের মতো” ঘটেছে। সেখানে একটি ছোট ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যে, ১৮ জন রোগীর শরীরে প্রায় ছয় মাস ধরে Dostarlimab নামের একটি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
পাশাপাশি, জানা গিয়েছে, তাঁরা সকলেই মলদ্বারের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এমতাবস্থায়, ওই ওষুধের ব্যবহারের ফলেই তাঁদের শরীর থেকে অদৃশ্য হয়েছে টিউমারের কোষ। এই প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে সংশ্লিষ্ট রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং সার্জারিও করা হয়। যার ফলে রোগীদের শরীরে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। এমনকি, প্রস্রাব এবং যৌন জীবনেও প্রভাব পড়েছিল।
যদিও, ঠিক তারপরেই অত্যন্ত সাধারণভাবে এই ওষুধ গ্রহণের ফলে তাঁরা দ্রুত ক্যানসার থেকে মুক্তি পান। আর এই ঘটনাই চমকে দেয় সবাইকে। এই প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যালান পি ভেনুক বলেন, এইভাবে প্রতিটি রোগীর ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কথা তিনি আগে কখনও শোনেননি। পাশাপাশি এই গবেষণাটিকে তিনি একটি যুগান্তকারী এবং “বিশ্বে প্রথম” হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।
এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা গবেষণাটিকে কার্যকর বলেও অভিহিত করেছেন। কারণ চিকিৎসাধীন রোগীদের কেউই ওই ওষুধের পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য কোনো জটিলতার সম্মুখীন হননি। এই প্রসঙ্গে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ আন্দ্রেয়া সারসেক এই সাফল্যের বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছেন, যেই মুহূর্তে রোগীরা জানতে পারলেন যে তাঁরা ক্যানসারমুক্ত, তাঁদের চোখ খুশিতে ভরে ওঠে।
চিকিৎসকদের মতে, ছয় মাস ধরে চলা এই ওষুধের ট্রায়ালের সময় রোগীরা প্রতি তৃতীয় সপ্তাহে Dostarlimab-এর একটি ডোজ নিতে থাকেন। পাশাপাশি, ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত সব রোগীই একই পর্যায়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। এই প্রসঙ্গে ওষুধের পর্যালোচনাকারী ক্যান্সার গবেষকরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, এই ফলাফল আশাব্যঞ্জক। তবে এখনও বড় আকারের পরীক্ষা প্রয়োজন।