বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির মামলায় কয়েক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। যার ফলে শিক্ষকের অভাবে কার্যত বন্ধ হওয়ার জোগাড় রাজ্যের একাধিক সরকারি প্রাথমিক স্কুল (Primary School)। কোথাও শিক্ষক নেই, তো কোথাও পড়ুয়াদের সংখ্যা হাতে গোনা। এইভাবে চলতে থাকলে যে কটা স্কুল এখন টেনেটুনে চলছে সেগুলোও আগামী দিনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কোনো রকমে টিকে আছে পাড়ুইয়ের এই প্রাথমিক স্কুল (Primary School)
একসময় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে, তাঁদের দানের টাকায় এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য তৈরি হয়েছিল পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তর চণ্ডীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (Primary School)। ছাত্রছাত্রীর অভাবে সেই স্কুল এখন কার্যত ধুঁকছে। বর্তমানে এই স্কুলে একজন শিক্ষক এবং একজন শিক্ষিকা আছেন। তবে ছাত্রছাত্রী রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এই হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র পড়ুয়ারাও স্কুলে না আসলে বেশিরভাগ দিনই বন্ধ থাকছে স্কুল।
তাই আক্ষেপের সুর গ্রামবাসীদের একাংশের গলায়। স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি উৎসাহের অভাবেই স্কুলটির (Primary School) এমন দশা হয়েছে। পড়ুয়ারা রোজ স্কুলে না আসায় মিড ডে মিল-ও প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর ১৯৮৪ সালে সর্বশিক্ষা মিশনের আর্থিক সাহায্যে কিছু সংখ্যক পড়ুয়াকে নিয়েই পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খঞ্জনপুর গ্রামে এই প্রাথমিক স্কুলের পথ চলা শুরু হয়েছিল।
পরবর্তীকালে স্কুলের দুটি ক্লাসরুম একেবারে জীর্ণ হয়ে পড়ায় সর্বশিক্ষা মিশনের সাহায্যে ২০১০-১১ সালে এই স্কুলটিকে দোতালা করা হয়। সে সময় ৩০-৩৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ভালোই চলছিল স্কুলটি। শিক্ষকও ছিলেন তিনজন। কিন্তু জানা যায় ২০১৮ সাল থেকেই আচমকা এই স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা কমে হয়ে যায় ১৫ জন। এরপর প্রধান শিক্ষক-ও অবসর নেওয়ায় স্কুলের সংখ্যা আরও কমে যায়।
২০২৩ সালে এই স্কুলে মাত্র সাত জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। আর চলতি বছরে মাত্র ৫ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছাত্র কিছুদিন আগেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। যার ফলে এখন এই স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৪ জন। কিন্তু তারাও নিয়মিত স্কুলে না আসায় স্কুলটি এবার কার্যত বন্ধ হওয়ার জোগাড়।
আরও পড়ুন: ‘আমার হাত বাঁধা …’ প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় যা বললেন জাস্টিস সিনহা
স্থানীয়দের দাবি, পড়ুয়ারা নিয়মিত স্কুলে না আসায় শিক্ষক-শিক্ষিকারাও রোজ স্কুলে আসেন না। এইভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের অভাবে এককালের এই জমজমাট স্কুল এখন আগাছায় ভরে উঠেছে। ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ড থেকে শুরু করে বসার বেঞ্চের ওপর পড়েছে ধুলোর পুরু আস্তরণ। স্কুলটিকে ঠিক মতো চালু করার ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগেরও অভাব রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা মেটে জানিয়েছেন, তারা চান স্কুলটি বেঁচে থাকুক। তার জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় আবেদনও জানিয়েছেন। অন্যদিকে স্কুলে না আসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁরা নাকি নিয়মিত স্কুলে আসেন। তবে ছাত্রছাত্রী স্কুলে না-আসলে তাঁরা কিছুটা আগে বাড়ি চলে যান।