বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কখনো কখনো এমন ঘটনা ঘটে যা জীবনটাই পরিবর্তন করে দেয়। আর সেই ঘটনার গভীর ক্ষতই মানুষকে বদলে দেয় অন্য এক মানুষে। ঘটনাটি ঘটেছে চেন্নাইয়ে। ৩৬ বছর বয়সী সীতাদেবী চালান একটি এনজিও। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনাই ছিল তার কাজ। কিন্তু হঠাৎই এক ঘটনা বদলে দিলো তার গোটা জীবনটাই। কিছুদিন যাবত করোনায় ভুগছিলেন সীতার মা বিজয় দেবী। ১ মে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে চারিদিকে ছুটতে থাকেন সীতা। চেন্নাইয়ের রাজীব গান্ধী সরকারি হাসপাতালের বাইরেও বসে থাকতে হয় অনেকক্ষণ। একদিকে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন মা অন্যদিকে হাসপাতালের বেড নেই। এই পরিস্থিতিতে একটুখানি অক্সিজেন পেলে হয়তোবা মাকে বাঁচাতে পারতেন সীতাদেবী। কিন্তু না, অনেক প্রচেষ্টার পর যখন তাকে সরকারি স্ট্যানলি হাসপাতালে ভর্তি করার সুযোগ হয় তখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।
সেই দিনই জীবনের বড় শিক্ষা দিয়েছিল ৩৬ বছর বয়সী সীতাদেবীকে। চোখের জল মুছে তাকে এগিয়ে যেতে হবে বাঁচাতে হবে আরো অনেক মাকে যারা ঠিক তার মায়ের মতই প্রাণবায়ু অভাবে কষ্টে ভুগছেন। সেই সূত্র ধরেই অক্সিজেন অটোর প্রচলন করেন তিনি। এই অটোয় বসলে কিছুক্ষণের জন্য আপনি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারবেন। আর ততক্ষণ অন্তত কিছুটা সময় পাওয়া যাবে হাসপাতালে খোঁজ করতে। যেমন ভাবা তেমন কাজ ব্যবস্থা হয়ে গেল এনজিও থেকেই। স্ট্রিট ভিশন এনজিওর কর্মীদের সহযোগিতায় তৈরি হল অক্সিজেন অটোরিকশা। ভিতরে রয়েছে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। গুরুতর অবস্থায় কোন রোগীকে বেশ কিছুক্ষণ বসিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করার ব্যবস্থা রয়েছে রিক্সার মধ্যেই।
তৈরি হতেই রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সীতাদেবী। ইতিমধ্যেই তার জন্য প্রাণ বেঁচেছে প্রায় ৩০০ মানুষের। নিজেই অটো চালিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সীতাদেবী। শুরুটা হয়েছিল রাজীব গান্ধী সরকারি হাসপাতালের সামনে থেকেই। কিন্তু এখন অক্সিজেন অটোকে সবাই চেনে। বহু মানুষকে ইতিমধ্যেই সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি করতে সক্ষম হয়েছেন সীতাদেবী। কুন্দ্রাতুরের বাসিন্দা লিঙ্গরাজও ভুগছিলেন করোনার সমস্যায়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল হঠাৎ নেমে যায় ৭২ এ। এই মারাত্মক অবস্থাতে হঠাৎই তিনি সঙ্গ পান সীতাদেবীর। বেশ কিছুক্ষণ অটোয় বসে অক্সিজেন নেওয়া অনেকটাই সুস্থ বোধ করতে থাকেন তিনি। এদিন সীতাদেবীর এই উদ্যোগকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমার অক্সিজেনের মাত্রা সেদিন বাহাত্তরে নেমে গিয়েছিল। অক্সিজেন অটোয় বসে অক্সিজেন নিই৷ বেশ কিছুক্ষণ পর মাত্রা আবার বিরানব্বইয়ে ফিরে আসে। বলতেই পারি প্রাণে বেঁচে যাই সীতাদেবীর কল্যাণে।”
পিপিই কিট পড়ে রোজই ছুটে চলেছেন সীতা দেবী। নিজের মাকে হারানোর পর শপথ নিয়েছিলেন অসহায় ভাবে আর কাউকে চলে যেতে দেবেন না। সেই থেকে শুরু পথ চলা। মহামারীর অন্ধকারে স্বজন হারানোর বেদনা যখন বুকের মধ্যে ক্রমশ চেপে বসছে তখন উদাহরণ হয়ে দাঁড়ান সীতা দেবীরাই।