বাংলা হান্ট ডেস্ক: কেবলমাত্র এক টাকার বিনিময়ে বছরের পর বছর ধরে রোগীদের চিকিৎসা করে গেছেন তিনি। এমনকি, জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষদের কথা ভেবে নিজের ফি আর বাড়াননি বোলপুরের মহতী ওই চিকিৎসক। বরং, তার পরিবর্তে নিখরচায় অসংখ্য দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসা করতে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। যে কারণে রোগীদের কাছে কার্যত ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন চিকিৎসক। যদিও, বৃহস্পতিবার ঘটল ছন্দপতন। সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বোলপুরের বিশিষ্ট জনদরদী চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Sushovan Banerjee)। আর এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই সর্বত্র নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মূলত, সমগ্ৰ বোলপুর তথা রাজ্যজুড়ে তিনি “এক টাকার ডাক্তার” নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। এমতাবস্থায়, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত রোগের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা ২৫ মিনিট নাগাদ মারা যান তিনি। উল্লেখ্য যে, খুব অসুবিধায় না পড়লে কখনোই চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখেননি তিনি। এমনকি, গত বছর এপ্রিল মাসে করোনার তীব্র ভয়াবহতার সময় তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় বাধ্য হয়ে কয়েকদিন তাঁর চেম্বার বন্ধ থাকলেও পরে তিনি সুস্থ হয়ে ফের রোগী দেখতে শুরু করেন।
পাশাপাশি, এই জনদরদী চিকিৎসকের মহতী কর্মকাণ্ডকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়। সারা জীবন ধরে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে রোগীদের চিকিৎসা করে এই অনন্য সম্মান অর্জন করেন তিনি। এদিকে, পদ্মশ্রী পেয়ে সুশোভনবাবু জানিয়েছিলেন, “আমি কখনোই এতটা আশা করিনি। ৫৬ বছর ধরে এক টাকায় রোগী দেখেছি। চোখের সামনে গরিব মানুষগুলোকে গামছা পেতে মুড়ি খেতে দেখে মনে হয়েছিল, এই মানুষদের কাছে এক টাকার বেশি কখনোই নেওয়া যায় না।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬০-এর দশকে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন বোলপুরের হরগৌরীতলার বাসিন্দা সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর তিনি এমএফপিএ এবং ডিসিপিও করেছিলেন। পাশাপাশি পেয়েছিলেন স্বর্ণপদক। এমতাবস্থায়, কর্মজীবনের শুরু থেকেই এক টাকায় রোগী দেখে আসছিলেন তিনি। এছাড়াও, বহু বিশিষ্টজনের চিকিৎসা করেছেন সুশোভনবাবু। পাশাপাশি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন তিনি।
এছাড়াও, যোগদান করেছিলেন রাজনীতির মঞ্চেও। এআইসিসি-র সদস্য থাকার পাশাপাশি বোলপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। সুশোভনবাবু বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব সামলান। এমতাবস্থায়, এই জনদরদী চিকিৎসকের প্রয়াণে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে সর্বত্র।
তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ! কল্যাণের ‘মাথায় কার হাত!’ মন্তব্যের পাল্টা দিলেন তৃণাঙ্কুর