বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পরিবার নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেই জঙ্গি হানায় (Pahalgam Terror Attack) প্রাণ গিয়েছে কলকাতার বিতান অধিকারীর (Bitan Adhikary)। ফ্লোরিডায় কর্মরত ছিলেন এই যুবক। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা পরিবারে। এই আবহে দেখা দেয় নয়া বিতর্ক। জঙ্গি হামলায় নিহত বিতানের স্ত্রী সোহিনীর নামে ক্রাউড ফান্ডিং (Crowd Funding) শুরু হতেই দেখা দেয় নানান প্রশ্ন। কারা এই টাকা তুলছেন? কেন এই টাকা তোলা হচ্ছে? কারা এই টাকা পাবে? সহ বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে আসে। অবশেষে বিতর্কের আবহেই জানা গেল ‘আসল সত্যি’।
বিতানের (Bitan Adhikary) স্ত্রীয়ের নামে টাকা তুলছিলেন ফ্লোরিডার বন্ধুরা!
সম্প্রতি দেখা যায়, সমাজমাধ্যমে একটি ক্যাম্পেন শুরু হয়েছে। কাশ্মীরে নিহত বিতানের নামে টাকা তুলছেন কিছু মানুষ। একটি থার্ড পার্টির মাধ্যমে লিঙ্ক তৈরি করে অনুদান সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেটিতে ক্লিক করলে দেখা যাচ্ছে, সদ্য স্বামীহারা সোহিনীর নামে ওই ক্যাম্পেন চলছে।
লেখা রয়েছে, ফ্লোরিডায় কর্মরত বিতান পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা মানসিক ও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। গৃহঋণ, গাড়ির কিস্তি থেকে শুরু করে সন্তানের ভবিষ্যৎ, সব কিছু কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিতানের পাশে দাঁড়াতে এই ক্রাউড ফান্ডিং শুরু করা হয়েছে। লক্ষ্য, ৩ লাখ ডলার সংগ্রহ করা। এই অর্থ বিতানের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সই জালিয়াতির অভিযোগ! কাঁথিতে শুভেন্দুর হিন্দু ধর্মসভা মামলায় বড় নির্দেশ হাইকোর্টের
লেখার শেষে উল্লেখ রয়েছে, বিতান (Bitan Adhikary) ও সোহিনীর বন্ধুদের একাংশের তরফ থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই নিয়েই দেখা দেয় বিতর্ক। নেটাগরিকদের একাংশের দাবি, এভাবে অর্থ সংগ্রহ অবৈধ। জনগণের দুর্বল মনের সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। আরেকাংশের আবার দাবি, বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুর পর পশ্চিমী দেশগুলিতে এভাবে ক্রাউড ফান্ডিং করা নতুন কিছু নয়। ফ্লোরিডায় বিতানের বন্ধুরাও তাই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এই বিতর্কের আবহে মুখ খুললেন এক প্রবাসী বাঙালি। তিনি লেখেন, ‘আমাদের এখানে ইউএসএ-তে কোনও ভারতীয় বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যু হলে আমরা অর্থ সংগ্রহ করি। যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর বন্ধুরা ফ্লোরিডা থেকে টাকা তুলেছেন। দয়া করে না জেনে একজন মানুষকে যিনি এতটা কষ্টের মধ্যে আছেন, তাঁকে খারাপ কথা বলবেন না’।
সেই স্ক্রিনশট শেয়ার করে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (Sanmoy Banerjee) নামের এক জনৈক নেটাগরিক। তিনি লেখেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টা ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের ননস্টপ প্রচারের প্রেক্ষিতেই আজ লিখতে বাধ্য হলাম । প্রয়াত বিতান ফ্লোরিডায় কর্মরত প্রবাসী বাঙালি। ঘটনা হল তাঁর সেখানকার সতীর্থ, বন্ধুবান্ধবরা এই উদ্যোগ নিয়েছেন এবং খুব দ্রুত কাজটি এগিয়ে বিতানের পরিবারের জন্য মার্কিন প্রবাসীদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত ১১৬,১২১ USD ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছেন । ২১০০ জন ডোনার কন্ট্রিবিউট করেছেন। এই পুরো তথ্য সেদেশের প্রথা অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাইকে জানিয়েও দিয়েছেন । ঘটনা হল, সেদেশের নিয়ম অনুযায়ী সেদেশের সরকারিস্তরে পুরো তথ্য সংগ্রহকারীদের পক্ষে দাতাদের নাম, গ্রহীতার নাম সব দিতে হয়’।
সন্ময় লেখেন, ‘এরপরও এই বাস্তব ঘটনা নিয়েও নোংরামি করতে ছাড়লো না তৃণমূল । ভাইপো বাহিনী কুৎসিৎ ভাষায় লিখতে শুরু করল “মরতে না মরতেই নেমে পড়লো টাকা তুলতে”। সঙ্গে বিতান অধিকারীর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর শ্বশুর, শাশুড়ির ভালো সম্পর্ক নেই সেটা নিয়েও যতটা নিচু লেভেলে প্রচার করা যায় তাও শুরু করলো। একটা এত বড় মর্মান্তিক মৃত্যুর পরেও যে দল এই স্কেলে নামতে পারে তাদের সম্বন্ধে কোন ঘৃণাই বোধ হয় যথেষ্ট নয়। মানুষ জানুন। মানুষকে বেশি করে জানান এই আসল তথ্যটা। অনুরোধ সবাইকে। পারলে সব গ্রুপে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন‘।
উল্লেখ্য, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় বর্তমানে তোলপাড় দেশ। এই ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন কলকাতার বিতান অধিকারী (Bitan Adhikary)। স্বামীকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ স্ত্রী সোহিনী। একরত্তি সন্তানও বিহ্বল’। এই পরিস্থিতিতে বিতানের প্রবাসী বন্ধুদের ক্রাউড ফান্ডিং নিয়ে দেখা দিয়েছিল বিতর্ক। অবশেষে সেই নিয়ে সামনে এল আসল সত্যি।