বাংলাহান্ট ডেস্কঃ করোনা আতঙ্ক যেন কারোর পিছু ছাড়ছে না। সারা বিশ্ব যেন তোলপাড় হচ্ছে এই মারণ ভাইরাসের জেরে। এই ভাইরাসের জন্য জটিল বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে। পাক সেনাবাহিনীর আটজন সেনা কর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
বিশেষ সুত্র মাধ্যমে জানা গিয়েছে, এঁদের সবাইকে সেনা হাসপাতালে আলাদা কেবিনে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শারীরিক নমুনা পরীক্ষা রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার পরই খবর ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। এঁদের মধ্যে চার জনেরই বেশ জ্বর রয়েছে। সঙ্গে হাঁচি, গায়ে হাতে পায়ে ব্যথা। করোনা আক্রান্ত যে আট সেনা কর্তা কোয়ারেন্টাইন হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে তিনজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, দু’জন ব্রিগেডিয়ার, একজন মেজর জেনারেল। এছাড়া আরও অনেক সেনা কর্তার মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁদেরও কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নিউজ টোয়েন্টি ফোর অনলাইন ডট কমকে পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, পাকিস্তানে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮। করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে সাড়ে আট লক্ষ বাসিন্দাকে। এঁরা সবাই বিদেশ থেকে গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানে এসেছেন। যে আট পাক সেনা কর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা কেউ মক্কা-মদিনায় গিয়েছিলেন, কেউ বা সদ্য ইউরোপ থেকে ফিরেছিলেন।
এই খবর চাউর হতেই ডিউটিতে যেতে বেঁকে বসেছে পাক সেনা। প্রথমে উপর মহলের ফরমান মানতে রাজি হয়নি ৪০ থেকে ৫০ জন পাক সেনা। এঁদের বেশিরভাগেরই ডিউটি ছিল রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দপ্তরে। অনেকের ডিউটি ছিল গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সদর দপ্তরে। এঁদের বিদ্রোহের খবর ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে। সঙ্গে সঙ্গে বেঁকে বসেছেন আরও শতাধিক পাক সেনা। তাঁরাও বিভিন্ন সেনা ছাউনিতে ডিউটি করতে যেতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন।
এঁদের অনেকের দাবি, তাঁদের ছুটি দেওয়া হোক বা কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হোক। না হলে মাস্ক, গ্লাভস, সেনা উর্দির উপর প্লাস্টিকের আবরণ ব্যবহার করতে দেওয়া হোক। ভাইরাসের হামলা রুখতেই এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে চান তাঁরা। না হলে তাঁরা ডিউটি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। প্রথমে কয়েকজন পদস্থ সেনার (সুবেদার, সিপাই, রাইফেলম্যান) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে সেনা সদর দপ্তর। সরকারি নির্দেশ বা সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা না মানলে তাঁদের কোর্ট মার্শাল করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা আতঙ্ক জটিল হতেই এবং বিদ্রোহে বহু সেনা শামিল হতেই পিছিয়ে আসে সেনা সদর দফতর। এখন শুরু হয়েছে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাজে যোগদানের অনুরোধ। সেনাদের শিবির ও ছাউনিগুলিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিপাকে পড়া রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।
সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, করোনা আতঙ্কে পাক সেনাদের ডিউটিতে যোগ দিতে না চাওয়া এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের বাদানুবাদের ঘটনা সত্যি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর পাক সেনাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরোধ বাধার এরকম ঘটনা নজিরবিহীন। সেনা কর্তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হতেই মৃত্যুভয়ে ভুগছেন খাকি উর্দিধারীরা। অদৃশ্য শত্রু করোনা ভাইরাসের অসম লড়াইয়ে হেরে যাবেন বলে আতঙ্কে ভুগছেন পাক সেনারা।