বাংলাহান্ট ডেস্ক: রমজান মাস চলছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই বিশ্ব জুড়ে মুসলিমরা মেতে উঠবেন খুশির ঈদ (Eid) উৎসবে। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটাই আলাদা। কারণ তারা অর্থনৈতিক ভাবে একেবারেই বিপর্যস্ত। পাকিস্তানের আমজনতার এতটাই খারাপ অবস্থা যে তারা দু’বেলা ঠিক মতো খেতে পাচ্ছেন না। তাই সামনে ঈদ এলেও পাকিস্তানে কতটা কী পালন হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পাকিস্তানে (Pakistan) চলা তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে লক্ষ লক্ষ পরিবার নিঃশব্দে ঈদ পালন করবেন এ বছর। আগের বছরগুলির তুলনায় এ বছর ঈদের জৌলুশ অনেকটাই কম। ঈদ মানে কেনাকাটা করা এবং সকলের সঙ্গে মিলে উৎসব পালন করা। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের আমজনতার হাতে পয়সার অভাব রয়েছে। একইসঙ্গে জিনিসপত্রের দাম এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে কোনও কিছুই সে ভাবে কেনা যাচ্ছে না।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্য এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে এক বস্তা আটার জন্য মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিচ্ছেন। শুধু খাবারই নয়, তেল ও গ্যাসের দামও আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। তাই এগুলি কেনাও কষ্টকর হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানিদের জন্য। একইসঙ্গে জ্বালানি তেলের দামও প্রতিদিনই বাড়ছে। এই কারণে খুশির ঈদের আগেও কোনও খুশি নেই আম পাকিস্তানির মনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছেও সাহায্য চেয়ে পাওয়া যায়নি।
রমজানের শুরুতে খবর আসে, খাবার আনতে গিয়ে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে এতটাই খারাপ অবস্থা যে রমজানে উৎসব করার পরিবর্তে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতির হার ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। মার্চে পাক শহরগুলিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছে গিয়েছিল ৪৭.১ শতাংশে। একইসঙ্গে গ্রামে এই হার ছিল ৫০.২ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আইএমএফ-এর থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, আইএমএফ-এর সঙ্গে ২০১৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তানের ৬৫০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা। কিন্তু ২০২২-এর নভেম্বর থেকে সেই অর্থ আটকে রয়েছে। পাকিস্তানে বর্তমানে মুরগির মাংসের দাম দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা। পাশাপাশি চালের দাম কেজিপ্রতি ৩৩৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁঠার মাংসের দাম সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ১৮০০ টাকায়। এছাড়াও কমলা লেবুর দাম ডজন প্রতি ৪০০ টাকা, কলা ডজনপ্রতি ৩০০ টাকা। বেদানা বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ৪০০ টাকায়।
এই পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছে বিদেশি ঋণের হার। আমেরিকার শান্তি প্রতিষ্ঠান সতর্ক করে জানিয়েছে, ২০২৩-র এপ্রিল থেকে ২০২৬-র জুনের মধ্যে ৭৭৫ কোটি ডলারের একটি বিদেশি ঋণ শোধ করতে হবে পাকিস্তানকে। একটি ৩৫০ কোটি ডলারের অর্থনীতির জন্য এই বিপুল পরিমাণ ঋণ শোধ করা প্রায় অসম্ভব। এছাড়াও আরও একাধিক ঋণের বোঝা রয়েছে পাকিস্তানের কাঁধে। তাই সব মিলিয়ে এ বছরের ঈদ খুব একটাও খুশির হবে না তাদের জন্য।