বিপদে রাশিয়ার কাছে হাত পেতেছিল পাকিস্তান, পাত্তাই দিল না পুতিনের দেশ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমানে পাকিস্তান একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন। এমতাবস্থায়, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহ এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানে গমের ঘাটতি রয়েছে। এদিকে, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা চাইলেও রাশিয়া থেকে তেল ও গম আমদানি করতে পারছেনা।

এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল গত মঙ্গলবার বলেছেন যে, পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার কারণে পাকিস্তানের জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে গম কেনা কঠিন হয়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের আগেই রাশিয়ার কাছ থেকে গম কেনার অনুরোধ জানিয়েছিল পাকিস্তান, কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাশিয়া সেই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি।

সিএনএন-এর সঙ্গে কথোপকথনে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তানকে তেল কেনার কোনো প্রস্তাব দেয়নি রাশিয়া। সেই জন্য রাশিয়ান তেল কেনার কথা কল্পনা করা আমার পক্ষে কঠিন।” তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে পাকিস্তান সরকারের গম কেনা সংক্রান্ত চিঠির জবাব দিচ্ছে না রাশিয়া। পাশাপাশি, ইমরান খান সরকার রুশ সরকারের কাছে গম কেনার জন্য অনুরোধ করেছিল। পাকিস্তানের নতুন সরকারও রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই গমের জন্য অনুরোধ করেছে।” সরকার জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যদি কেউ পাকিস্তানে গম রপ্তানি করতে চায়, তাহলে তাদের অবিলম্বে পাকিস্তানে গম পাঠানো উচিত। পাকিস্তানি মন্ত্রী বলেন, “আমরা তাদের কাছ থেকে গম কিনতে পেরে খুশি হব।”

পাকিস্তান রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেলের প্রস্তাব আশা করছে:
মিফতাহ বলেন, রাশিয়া যদি কম দামে তেল দেয়, তাহলে পাকিস্তান তা বিবেচনা করবে। একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাশিয়া যদি পাকিস্তানকে সস্তায় তেল দেয়, তবে এই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাঙ্ক রাশিয়ার তেল কেনার মতো অবস্থায় নেই। এছাড়াও, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইমরান খানের সেই দাবিও অস্বীকার করেছেন যে, রাশিয়া পাকিস্তানকে তেল এবং গম ক্রয়ের উপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে, কে ইমরান খানকে এই অব্যাহতির কথা বলেছে আমি জানি না। খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই এই ধরনের কাজ করছেন। তিনি সেই একই ব্যক্তি যিনি বলছিলেন যে, আমেরিকান ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আর এখন তাঁরা এই নতুন কথা বলছেন। সেই সময় রাশিয়া যদি পাকিস্তানের কাছে সস্তায় গম ও তেল বিক্রি করে তাহলে খান কেন তা কেনেননি?”

তিনি বলেন যে, এই সরকার রাশিয়া থেকে অন্তত গম আমদানির জন্য আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করছে। কারণ তেলের মতো খাদ্যশস্য কেনার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

ঋণ দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের কাছ থেকে কঠিন সিদ্ধান্তের আশা করছে IMF:
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে থাকা পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) কাছ থেকে ক্রমাগত ঋণ নিয়ে আলোচনা করছে। মিফতাহ ইসমাইলকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে, পাকিস্তান সরকার দোহায় আইএমএফের সাথে আলোচনা করেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি জুনের শুরুতে সংসদে যে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছি তার জন্য আইএমএফ অপেক্ষা করছে। এর পরে আমি আশা করি আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব। আইএমএফ-ও আশা করছে যে, তেল, পেট্রোল এবং ডিজেলের উপর যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল তা আমরা বন্ধ করব। যা আগের সরকার দিয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আইএমএফ চায় আমরা বিদ্যুতের শুল্কে দেওয়া ভর্তুকিও বন্ধ করি। আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি লঙ্ঘন করে আগের সরকার এই ভর্তুকি দিয়েছিল। আমি নিশ্চিত যে, আমরা আইএমএফের একটি তহবিলের চুক্তি পাব। তবে এর জন্য একটু কর বাড়াতে হবে এবং দেশ চালাতে হলে কম ব্যয়ের পথ অবলম্বন করতে হবে।”

ইমরান খান সরকারকে নিশানা:
ইমরান খান সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও পাকিস্তানে পূর্বের ইমরান খান সরকার আইএমএফের সাথে তহবিল চুক্তি লঙ্ঘন করে পেট্রোল, ডিজেল বিদ্যুৎ ইত্যাদিতে উচ্চহারে ভর্তুকি দিতে থাকে।

images 2021 08 05T095443.684

এদিকে, ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধে মিফতাহের তোলা অভিযোগের জবাবে, প্রাক্তন মানবাধিকার মন্ত্রী এবং পিটিআই নেতা শিরিন মাজারি বলেছেন, আমেরিকার ভয়েই পাকিস্তান রাশিয়ার তেল কিনছে না। নইলে রাশিয়ার তেল কেনার ওপর কোনো বাধা নেই।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর