সেনাকে দু’বেলা খাওয়াতে পারছে না পাকিস্তান! বাঁচার জন্য ভারতের সঙ্গে ‘শান্তি’র বার্তা শহবাজ শরিফের

বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কট (Pakistan Crisis) এতটাই গুরুতর আকার নিয়েছে যে তারা ফের অন্য দেশের কাছে সাহায্য চাইছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কাছে ৪ বিলিয়ব ডলার সাহায্য চেয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহবাজ শরিফ এবং সেনার মুখ্য জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনির। পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার সংরক্ষণ একেবারে তলানিতে। তাই পুরোপুরি অন্ধকারে না তলিয়ে যেতে গেলে এই অর্থ তাদের ব্যাপকভাবে প্রয়োজন।

পাকিস্তান সরকার সূত্রে খবর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির তরফে তাদের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছেন শহবাজ শরিফ। ভারতের সঙ্গে তিনটি যুদ্ধের পর দারিদ্র ও বেকারত্ব চূড়ান্তভাবে বেড়েছে পাকিস্তানে। সে দেশের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভারত দিনের পর দিন উন্নতি করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানকে অন্য দেশের কাছে ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে। 

Shahbaz Sharif

কিন্তু হঠাৎ চিরশত্রু প্রতিবেশী ভারতের থেকে সাহায্য কেন চাইছে পাকিস্তান? 

১। পুরোপুরি ভাবে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা করছে পাকিস্তান। সরকার বদলের পর অর্থনীতি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে আর এক পয়সাও মজুত নেই। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের কাছে মাত্র ৪.২ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের কাছে এই সপ্তাহের আমদানি বিলিংয়ের মাত্র দুই তৃতীয়াংশ মজুত রয়েছে। 

২। তাদের বিদেশি মুদ্রার মজুত ৫.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তবে আগামী তিন মাসে ৮.৩ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ শোধ করতে হবে তাদের। গত অর্থবর্ষে পাকিস্তান তাদের সামরিক বাজেট জিডিপি-র ২.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। অর্থাৎ সীমান্তে কোনও রকম সামরিক সংঘর্ষ করতে পারবে না তারা। এমনকী, সেনাবাহিনীকে দু’বেলা খেতে দিতে পারছে না তারা! 

pakistan crisis 2023

৩। পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তাদের সামরিক বাজেট কমাতে বলছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাও একই কাজ করেছে। ২০২২-এ বন্যার জন্য পাকিস্তানের অনেকটা চাষযোগ্য জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় তাদের। এছাড়াও তাদের কাছে পর্যাপ্ত সবজি, চাল ও আটা মজুত নেই। ডলারের মজুতও তলানিতে থাকায় এগুলি আমদানি করাও সম্ভব নয় তাদের। এমনকী, তাদের কাছে ইনসুলিনের মতো জীবনদায়ী ওষুধেরও মজুত নেই। বিদেশ থেকে আমদানি করার অবস্থাতেও নেই তারা।

৪। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে পাকিস্তান তাদের রফতানির টার্গেটও পূরণ করতে পারছে না। ফলে তাদের ৪৮.৬৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। শহবাজ শরিফের সরকার ৮০০-র উপর বিলাসবহুল জিনিস নিষিদ্ধ করেছে। তাতেও এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারছে না পাকিস্তান।

Pakistan Crisis

৫। পাকিস্তানের ‘বন্ধু’ চিনও এ বার তাদের পাশে দাঁড়াতে নারাজ। চিন বালোচিস্তানে একটি সামরিক পোস্ট তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান পুরোপুরি ভাবে অনুমতি দেয়নি। সূত্রের খবর, পাকিস্তানের এই ব্যবহারে ক্ষুব্ধ শি জিনপিং। তাই তিনি পাকিস্তানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে নারাজ।

৬। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ভারত, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। সম্প্রতি আই ২ ইউ ২ সম্মেলন হয়েছে। যা পাকিস্তানকে কোনঠাসা করেছে। এর ফলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও সৌদি আরবের মতো দেশের সমর্থন হারিয়েছে পাকিস্তান। 

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্রের খবর, ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ফের চালু করার একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে পাকিস্তান। গত বছরের বন্যার পর ভারত থেকেই সবচেয়ে সহজে খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারবে তারা। প্রস্তাবে লেখা হয়েছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, একমাত্র ভারতই পাকিস্তানকে সাহায্য করতে পারে। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ট্রেড রুট রয়েছে। 


Subhraroop

সম্পর্কিত খবর