বাংলা হান্ট ডেস্ক: চলতি বছরেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia-Ukraine War) ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছে সমগ্ৰ বিশ্ব। ঠিক সেই আবহেই এবার ক্রমশ অবস্থার অবনতি হচ্ছে চিন (China) এবং তাইওয়ানের (Taiwan) মধ্যে। এদিকে, ঠিক এই সময়ে তাইওয়ান প্রসঙ্গে এবার “বন্ধু” চিনের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল পাকিস্তানকে (Pakistan)। শুধু তাই নয়, সরাসরি আমেরিকার বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন শাহবাজ শরিফের দেশ।
এর পাশাপাশি “একচিন নীতি”-র প্রতিও নিজেদের সমর্থন জানিয়েছে পাকিস্তান। মূলত, সম্প্রতি মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের সমালোচনা করে তা নিরাপত্তা ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসলামাবাদ। এই প্রসঙ্গে গত বুধবার এক বিবৃতির মাধ্যমে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রক জানায় যে, তাইওয়ানের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমনকি, পাকিস্তান নিজের “আমেরিকা বিরোধী” অবস্থানও ক্রমশ স্পষ্ট করতে চাইছে। পাশাপাশি, সেদেশের বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলা হয়েছে, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সমগ্ৰ বিশ্ব একটি জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি, এর ফলে খাদ্য ও জ্বালানির জোগানজনিত সমস্যাও তৈরি হয়েছে। তাই, বিশ্ব আরও একটি নতুন সংঘাতের মুখোমুখি হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে এখন আর নেই। পাকিস্তান বিশ্বাস করে যে, পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতেই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ভর করে। পাশাপাশি, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা কখনোই কাম্য নয়।”
জানা গিয়েছে যে, গত মঙ্গলবার রাতে আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি চিনা রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই মালয়েশিয়া থেকে তাইওয়ানে পৌঁছে যান। এমতাবস্থায়, তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমেরিকার যুদ্ধবিমানের বহর ঢুকে পড়ে চিন সাগরেও। পেলোসির নেতৃত্বাধীন মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যেই আমেরিকার বিমানবাহিনীর ১৩ টি যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন জাপানের বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে যায়।
চিন দিয়েছে হুঁশিয়ারি: আর ওই ঘটনাই ভালোভাবে নেয়নি চিন। শুধু তাই নয়, ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে চিনা বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র হুয়া চুনইয়ং ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এর বড় মূল্য দিতে হতে পারে।” জানিয়ে রাখি যে, ১৯৯৭ সালের পরে এই প্রথমবারের জন্য আমেরিকার কোনো শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাইওয়ান সফরে গেলেন।
কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা: এদিকে, পাকিস্তানের চিনের প্রতি সমর্থনের প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতি রীতিমতো ধুঁকছে। পাশাপাশি, সেদেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও প্রায় শূন্য হয়ে এসেছে। ব্যাহত হয়েছে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি। সর্বোপরি, ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছে সেই দেশ। এমতাবস্থায়, এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে পাকিস্তান কার্যত মরিয়া হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF) থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য।
তবে, সেখানেও মেলেনি স্বস্তি। কারণ, সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে ওই ঋণ পেতে সমস্যার মুখে পড়েছে পাকিস্তান। আর সেই কারণেই এই গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে চিনের পাশে থেকে তাদের খুশি করে আর্থিক সহায়তার আশায় রয়েছে দেশটি। পাশাপাশি, নিজেদের “আমেরিকা বিরোধী” অবস্থানকে স্পষ্ট করেও সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে পাকিস্তান।